মোঃ রাসেল ইসলাম, বেনাপোল প্রতিনিধি : দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল চেকপোস্টে আমদানিকৃত পণ্য চালানের তথ্য বিভিন্ন সংস্থার এন্ট্রির পরিবর্তে কাস্টমসের এন্ট্রি করার নির্দেশনামূলক চিঠির কার্যকারিতা এক মাস অতিবাহিত হলেও বাস্তবায়ন করেনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। ফলে ভারত থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশ পণ্য এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বেনাপোল চেকপোস্টে আমদানি পণ্যচালানের তথ্য আগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ একাই এন্ট্রি করত। বর্তমানে তাদের পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিজিবিও এন্ট্রি করে থাকে। পণ্যবাহী ট্রাক/যান সংক্রান্ত তথ্য এন্ট্রি পয়েন্টে একাধিক সংস্থা এন্ট্রি করার জন্য পণ্যজট/যানজটের অন্যতম একটি কারণ বলে উভয় দেশের বন্দর ব্যবহারকারীদের অভিযোগ।
গেলো বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর কাস্টম হাউজে পরামর্শক কমিটির সভায় বিভিন্ন স্টোকহোল্ডারের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করা হয়। একাধিক সংস্থার তথ্য এন্ট্রির কারণে পণ্য প্রবেশে বিলম্বের বিষয়টিও ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় সভায় উত্থাপন করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টমস, বন্দর ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদনেও একাধিক সংস্থা কর্তৃক আমদানি চালানের তথ্য এন্ট্রিকরণকে পণ্য চালান প্রবেশে বিলম্বের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এই প্রতিবেদনের আলোকে ৪ মার্চ বেনাপোল কাস্টম কমিশনার এক আদেশে জানায় আমদানিকৃত পণ্য সংক্রান্ত মেনিফেস্ট গ্রহণ এবং তা ব্যবস্থিত করার এখতিয়ার কেবলমাত্র কাস্টম কর্তৃপক্ষের। আমদানি পণ্যবাহী যানজট ও পণ্যজট নিরসন এবং পণ্যচালান খালাস ত্বরান্বিতকরণপূর্বক রাজস্ব আহরণে অধিকতর গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে আমদানি পণ্যচালানের তথ্য বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক এন্ট্রির পরিবর্তে কেবল কাস্টম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এন্ট্রির প্রবর্তন করা হলো। দি কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর সেকশন ২১৮ বি প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ আদেশ জারি করা হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। ওই আদেশের পত্র এক মাস আগে বিজিবি ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হলেও তারা এ আদেশ না মেনে এখনো চেকপোস্টে এন্ট্রি চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে পণ্য আমদানিতে বাধাগ্রস্থ থেকেই যাচ্ছে।যে পরিমান ট্রাক প্রবেশ করার কথা সে পরিমান ট্রাক প্রবেশ করতে পারছে না৷
এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, দি কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর সেকশন ৪৩ ও ৪৪ এবং সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্য সংক্রান্ত মেনিফেস্ট গ্রহণ এবং তা ব্যবস্থিত করার এখতিয়ার কেবলমাত্র কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের এন্ট্রি বন্ধ করবে বলে আমাকে জানিয়েছেন। বিজিবির সঙ্গেও কথা চলছে। দ্রুত পণ্য আমদানির স্বার্থে সবাই বিষয়টি নিয়ে একমত পোষণ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি আরো জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টম হাউজে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, যা অর্জনে কাস্টম কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২৪/৭ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বন্দরে পণ্য প্রবেশে বাধাগ্রস্থ হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অর্থাৎ রাজস্ব পুরনে ব্যর্থ হবে এ কাস্টম হাউজ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।