নিজস্ব প্রতিবেদক :
ধর্ষণের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় এক কিশোরীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে এ ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ -২য় আদালতের বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তী এক জনাকীর্ন আদালতে এ আদেশ দেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামীর নাম রফিকুল ইসলাম শিপন (৪০)। সে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর গ্রামের ওয়াজেদ ঢালীর ছেলে। তার পালিত পিতা হেকমত শেখের বাড়ি তালা উপজেলার মুড়োগাছায়।
মামলার বিবরনে জানা যায় হেকমত শেখ সরকারি রাস্তার দু’ ধারের গাছ কিনতো। তার পালিত সন্তান রফিকুল ইসলাম শিপন, ময়না ও বক্কর কেনা গাছ কাটার জন্য কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা শেখপাড়ার আকবর হোসেন মোড়লের বাড়িতে ২০০৯ সালের ১২ জুলাই এর তিন /চার দিন আগে থেকে থাকতো। ২০০৯ সালের ১২ জুলাই রাত ১০টার দিকে ভাত খাওয়া শেষে আকবর মোড়লের মেয়ে সালমা(২৭) একটি ঘরে দরজা দিয়ে খাটে ও তার ভাই আশরাফুল মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়ে। পাশের খোলা ঘরের খাটে বক্কর ও ময়না, মেঝেতে শিপন ঘুমোতে যায়। পাশের ঘরে বাদি আকবর মোড়ল ও তার স্ত্রী সোনাভান বিবি ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন ১৩ জুলাই ভোরে সোনাভান বিবি উঠে মেয়ের ঘর খোলা দেখতে পান। একপর্যায়ে মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে সে মারা গেছে বলে জানতে পারেন। তখন তার পাশে মোবাইলটিও ছিল না। এ সময় পাশের ঘরে বক্কর ও ময়না থাকলেও শিপনকে দেখতে পাননি। বিষয়টি স্বামী আকবর মোড়লকে বলার পর প্রতিবেশি পঙ্কজ জোয়ারদারের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে সর্বত্র জানানোর একপর্যায়ে ওই দিন সকালে শিপনকে শ্যামনগরের ভুরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেনের সহায়তায় আটক করে ইউনিয়ন পরিষদে সোপর্দ করা হয়। কালিগঞ্জ থানার পুলিশ শিপনকে সেখান থেকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে শিপন জানায় যে, সালমা ভোরে প্রসাব করে ঘরে ঢোকার পর সে তাকে কু’ প্রস্তাব দেয়। রাজী না হওয়ায় সালমার বুকে উঠে মুখে ও মাথায় কিল ঘুষি মেরে মুখ চেপে ধরে। ধর্ষণের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার একপর্যায়ে সালমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
১৩ জুলাই রাতে নিহতের পিতা আকবর মোড়ল বাদি হয়ে রফিকুল ইসলাম শিপনের নাম উল্লেখ করে কালিগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা(জিআর-৯৪/০৯ কালি) দায়ের করেন। ১৪ জুলাই আসামী রফিকুল ইসলাম শিপন বিচারিক হাকিম এমএ সাঈদের খাস কামরায় সালমাকে ধর্ষনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে মর্মে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক আব্দুর শুকুর মৃধা এজাহারভুক্ত আসামীর নামে ২০০৯ সালের ২৫ আগষ্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১১ সালের ২৭ জুন আদালতে আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় বাদিপক্ষের ১৭জন ও আসামী পক্ষের তিন জন সাঁফাই সাক্ষী গ্রহণ করা হয়।
মামলার নথি ও সাক্ষীদের জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে আসামী রফিকুল ইসলাম শিপনের বিরুদ্ধে ফেওজদারি দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক উপরোক্ত আদেশ দেন। তবে আদেশের সময় আসামী শিপন কাঠগোড়ায় উপস্থিত ছিল না।
আসামী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাড. সৈয়দ ইফতেখার আলী। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. তপন কুমার দাস।