অবশেষে ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
একই সঙ্গে তিনি ইরানের উপর পারমাণবিক এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গরবার দুপুরে ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই ঘোষণা দেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরানের সঙ্গে যে পরমাণু চুক্তি করা হয়েছে সেটি বজায় থাকলে দেশটি পারমাণবিক শক্তি অর্জন করবে। তিনি বলেন, এ ধরনের চুক্তি কখনোই করা উচিত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ইরান সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দিচ্ছে। লেবাননের হিজবুল্লা, ফিলিস্তিনের হামাস এবং আল-কায়েদাকে ইরান সমর্থন দিচ্ছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে ২০১৫ সালে ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দেশটির সঙ্গে চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি। চুক্তির আওতায় ইরান নিজেদের পরমাণু কর্মসূচি স্থগিত রাখার ব্যাপারে একমত হয়।
এর বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আংশিক তুলে নেয়া হয়। তবে শুরু থেকে এই চুক্তি নিয়ে সমালোচনা করেন ট্রাম্প। ২০১৬ সালে নির্বাচনি প্রচারণার সময় তিনি ঘোষণা দেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে পূর্বসূরি বারাক ওবামার করা এ চুক্তি বাতিল করবেন তিনি।
ট্রাম্প এ চুক্তিকে বাতিল করতে পারেন বলে আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রব মালি।
তিনি বলেন, ইরানের ভাগ্য এখন ইউরোপীয় নেতাদের হাতে। বর্তমানে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পিস-বির্ডিং থিংকট্যাংক। সোমবার রব বলেছিন, ‘একমাত্র ইউরোপের সদস্যই এ চুক্তি বহালে তেহরানকে আশ্বস্ত করতে পারে। আমি মনে করি ট্রাম্প এ চুক্তি থেকে সরে আসতে পারেন।’
এদিকে, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সোমবার একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ইরানের সঙ্গে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা মেনে চলবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বিশ্বকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে এ পদক্ষেপ হবে সবচেয়ে ভালো উপায়। জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভস লা দ্রিয়াঁ সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘আমরা পরমাণু সমঝোতা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ এই সমঝোতা পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে রক্ষাকবচ ও ইরানকে পরমাণু অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার সঠিক উপায়।’
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো ম্যাস বলেন, ‘আমরা অব্যাহতভাবে বিশ্বাস করি, এই সমঝোতা বিশ্বকে নিরাপদ করেছে এবং পরমাণু চুক্তি ছাড়া বিশ্ব অনেকটা অনিরাপদ হয়ে উঠবে।’
তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে যেকোনো ব্যর্থতা সংঘাত ডেকে আনতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ইরানের পরমাণু চুক্তির বিষয়ে ট্রাম্পকে বোঝাতে জোর চেষ্টা চালিয়ে গেছে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য।
শেষ মুহূর্তে তাদের ওই প্রচেষ্টার ভেস্তে গেল। সোমবার এক টুইটে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সময় দুপুর ২টায় তিনি এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি অব্যাহত রাখার পক্ষে থাকলেও ভবিষ্যতে দেশটির ‘ব্যালেস্টিক মিসাইল প্রোগ্রাম’র কী হবে তা নিয়ে আলোচনায় রাজি আছে। দেশটির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির বেশ কিছু ধারার মেয়াদ ২০২৫ সাল নাগাদ শেষ হয়ে যাবে।