নিউজ ডেস্ক: মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক বলেছেন, যুদ্ধপরাধ মামলার কোনো আসামির সঙ্গে প্রসিকিউটরের বৈঠক করার কথা নয়।
এটা তার কাজও নয়। প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ যা করেছেন সেটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। তিনি আসামির সঙ্গে দেখা করে মামলার গোপন নথির ফটোকপি তাকে দিয়েছেন। আসামি ও প্রসিকিউটরের মধ্যে কথোপকথনেই এটা বেরিয়ে এসেছে। তুরিন আফরোজের বিষয়ে তদন্ত সংস্থার বক্তব্য কি জানতে চাইলে সানাউল হক রোববার রাতে এসব কথা বলেন।
তুরিন আফরোজ যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গত বছরের ১৮ নভেম্বর গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে গোপনে বৈঠক করেন। এর আগে তিনি ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সাক্ষাৎ করতে চান। ওয়াহিদুল হককে যে কোনো দিন আটক করা হতে পারে জানিয়ে এ নিয়ে তিনি আসামির সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। রেস্টুরেন্টে বৈঠকের সময় তারা পৌনে তিন ঘণ্টা মামলার নথিপত্র নিয়ে আলোচনা করেন। তখন ওয়াহিদুল হকের কাছে তুরিন আফরোজের সহকারী ফারাবী কয়েকটি প্রস্তাব দেন। জানতে চান তার টাকা পয়সা কেমন আছে। এ সময় ওয়াহিদুল হকের হাতে তিনি মামলার গোপন নথির কপি তুলে দেন।
প্রাথমিকভাবে এ অভিযোগ পেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ৭ মে তুরিন আফরোজকে প্রথমে ওয়াহিদুল হকের মামলা থেকে এবং পরের দিন ৮ মে অন্য সব মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন। সেই সঙ্গে তুরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগটি আইন মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানিয়ে তদন্ত চান। আইনমন্ত্রী বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। ২০ মে দেশে আসার পর তিনি তুরিনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক আরও বলেন, তাকে (তুরিন) তদন্ত কাজের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। তদন্তের ক্ষমতাও দেয়া হয়নি। আসামির সঙ্গে বসার তার কোনো সুযোগ নেই। কারণ তিনি প্রসিকিউটর। প্রয়োজনে আমরা আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারি। তার কাজ ট্রাইব্যুনালে। ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনার জন্যই চিফ প্রসিকিউটর ওনাকে অ্যাসাইন করেছেন। কিন্তু ওনি যা করেছেন তা নৈতিকতা সমর্থন করে না। কারণ তার কনভারসেশনে আছে ‘আপনার জন্য ফটোকপি করে নিয়ে এসেছি।’ তার (তুরিন) আচরণ পেশাদার আচরণ বলে মনে হয়নি। এখন বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। সেখানে তদন্তের জন্য আদেশ করতে হবে। আইন মন্ত্রণালয়ই এখন সিদ্ধান্ত দেবে কি হবে এ বিষয়ে।
গত বছরের ১১ নভেম্বর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে মানবতাবিরোধী অপরাধের আসামি ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মোহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে ২৪ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠান। ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান। গ্রেফতার করার সময় ওয়াহিদুল হকই প্রকাশ করেন তার সঙ্গে তুরিনের গোপন বৈঠক হয়েছে এবং দু’জনের মধ্যে পৌনে ৩ ঘণ্টার কথোপকথনের রেকর্ডও আছে তার কাছে। পরে তার মোবাইল জব্দ করে রেকর্ডটি কপি করেন তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগটি লিখিতভাবে ট্রাইব্যুনাল থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সঙ্গে তুরিন ও আসামির মধ্যে কথোপকথনের সিডির কপিও সংযুক্ত করে দেয়া হয়। তুরিন আফরোজ আসামির কাছ থেকে কি ধরনের সুবিধা চেয়েছেন তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটর।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর।