বিনোদন ডেস্ক: বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া তার সাবলীল অভিনয়ে যেমন সবার কাছে আপন হয়েছেন ঠিক তেমনি নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের সাথেও আন্তরিক হয়ে মেশার চেষ্টা করেছেন এই অভিনেত্রী।
মিয়ানমারে সেনা নিপীড়ন ও সহিংসতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। সোমবার (২১ মে) রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে হাজির হন প্রিয়াঙ্কা।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে আপন জনের মতো মিশতে তাই সোমবার (২১ মে) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তাবলয় একপ্রকার তুলে দিয়েছিলেন তিনি।
শুরুতে রোহিঙ্গাদের প্রিয়াঙ্কার কাছে ঘেঁষতে বাধা দিচ্ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু নিরাপত্তার ঘেরাটোপ ছেড়ে আপন জনের মতো রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে মিশে যান প্রিয়াঙ্কা। তাদেরকে মমতা ভরে জড়িয়ে ধরে আদর করেন। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের কষ্টের কথা শোনেন।
কিন্তু এ সরলতা তার জন্য উল্টো হয়ে দাঁড়ায়। রোহিঙ্গা নারী-শিশু ও প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মী ও সাধারণ মানুষও কাছাকাছি এসে রূপালী পর্দার স্বপ্নের মানুষটাকে দেখার সুযোগ পান। এ স্মরণীয় মুহূর্তকে ধারণ করে রাখতে সঙ্গে থাকা স্মার্টফোনে প্রিয় নায়িকাকে অনেকে সেলফি বন্দি করেছেন।
সিংহভাগই নির্দিষ্ট দূরত্বে নিজেদের সেলফি বন্দি করলেও কেউ কেউ আবার এ সুযোগকে করেছেন অপব্যবহার। বাধাহীনভাবে কাছে যেতে পারায় বৌ কিংবা প্রেমিকা বা বন্ধুদের সঙ্গে মুঠোফোনে চ্যালেঞ্জ ধরেছেন প্রিয়াঙ্কার গা-ঘেঁষেই সেলফি বন্দি হবেন। সেভাবে করেছেনও কেউ কেউ। এবং এসব চিত্র আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গর্বের সাথে আপলোডও করেছেন তারা। প্রিয়াঙ্কা যখন রোহিঙ্গা নারী-শিশু ও ইউনিসেফ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলছিলেন চ্যালেঞ্জ পূরণ করতে এ সময়টাকে বেছে নিয়ে গা ঘেঁষেই সেলিফ বন্দি হয়েছেন কেউ কেউ।
পরিস্থিতি বিদঘুটে না করতে সে সময়ে প্রতিবাদ না করলেও এসব আচরণে ক্ষেপেছেন এই নায়িকা। হোটেলে ফিরে এ নিয়ে তিনি রীতিমতো ক্ষোভ ঝেরেছেন। পরিবর্তন আনেন ক্যাম্প ভিজিটের নির্ধারিত সিডিউলও। সিদ্ধান্ত দেন মঙ্গলবার (২২ মে) ক্যাম্প পরিদর্শনকালে ইউনিসেফ কর্মকর্তা ও নিজস্ব নিরাপত্তাবাহিনী ছাড়া কেউ কাছে থাকবে না। কোনো মিডিয়াকর্মী, স্থানীয় জনগণ এমনকি বাংলাদেশি নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরাও না। হয়েছেও তা।
সিডিউল মতে, মঙ্গলবার সকালে টেকনাফের সাবরাং হারিয়াখালি, নয়াপাড়া, উনচিপ্রাং ও লেদা ক্যাম্পে যাওয়ার কথা ছিল প্রিয়াঙ্কার। কিন্তু তিনি সকাল সাড়ে ৯টায় সাবরাংহ হারিয়াখালি ক্যাম্পে গেলেও ইউনিসেফের নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া কাউকে তার এক কিলোমিটারের ভেতর আসতে দেয়া হয়নি। নিজের মতো করেই ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশু ও নারীর সাথে কথা বলেন তিনি। এরপর নাফ নদীর তীরে গিয়ে মিয়ানমারের সীমানা ও অন্যান্য এলাকা অবলোকন করে ছবি তুলে নেন।
এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ থানার ওসি রনজিত বড়ুয়া জানান, সোমবার (২১ মে) বাহারছরায় সবার সাথে প্রাণবন্ত আচরণ করায় সেলফির নামে তামাশা করেছেন অনেকে। ফলে মঙ্গলবার (২২ মে) কঠোরভাবে সবার কাছ থেকে দূরে থেকেছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তার চাওয়া মতো নিরাপত্তা কঠোরভাবে পালন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ নয় গণমাধ্যমকর্মী এবং স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীকেও কাছে যাওয়ার অনুমতি দেননি তিনি।
এদিকে, মঙ্গলবার সারাদিন টেকনাফেই সিডিউল রাখলেও সাবরাং হারিয়াখালি থেকে যেন তেন ভাবেই লেদা, উনচিপ্রাং ক্যাম্প পরিদর্শন করে প্রিয়াঙ্কা বালুখালি ক্যাম্পে চলে যান। সেখানে অল্প কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে বিকেলেই হোটেলে ফিরে যান। সব জায়গাতেই প্রথম দিনের মতো প্রফুল্লতা ছিল না তার অবয়বে।
এ নিয়ে ইউনিসেফর এক কর্মকর্তা বলেছেন, এটি দুঃখজনক। কোনো সেলিব্রেটি যখন পাবলিক প্লেসে আসে তখন সচেতন পেশাজীবীদের উচিত তার সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু সেলিব্রেটিরা যখন সাধারণ মানুষের সাথে সাবলীলভাবে মিশে আন্তরিক হতে চাই তখনও উচিত নিরাপত্তা বলয়ের মতোই তার কাছ থেকে নূন্যতম দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। এতে ভক্তকূল সম্পর্কে তার ধারণাটা পরিচ্ছন্ন হবে। সোমবার ইনানীর মনখালীতে কিছু মিডিয়াকর্মী বিশ্রিভাবে সেলফিবাজি করেছে। যা নিয়ে ভীষণ মনোক্ষুণ্ন হয়েছেন শুভেচ্ছাদূত।
তাই মঙ্গলবারের পরিদর্শনে কাউকে কাছে আসতে না দিতে কঠোরভাবে বলেদেন।
বুধবার (২৩ মে) ও বৃহস্পতিবারের (২৪ মে) পরিদর্শনে একই নির্দেশনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তাই নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের সহমর্মিতা দেখাতে আসা বিশ্ব অতিথিদের মতো শুভেচ্ছা দূত তারকাদের সাথেও দূরত্ব বজায় রেখে সম্মানজনক সহযোগিতার আহবান জানান তিনি।