ন্যাশনাল ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী বলেছেন, গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়া হঠাৎ পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি ওই সময়টার কথা বলতে পারছেন না। তার একটি ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।
তিনি বলেন, সামনে আরও বড় ধরনের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি আছে। তার সুচিকিৎসার প্রয়োজন। এ জন্য অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
শনিবার বিকালে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে দেখতে পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে যান তার ব্যক্তিগত চার চিকিৎসক। সেখানে তার দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় অবস্থান করেন।
কারাগার থেকে বেরিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী তাদের পর্যবেক্ষণ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
খালেদা জিয়ার অনেক মেডিকেল টেস্ট করা দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, কতগুলো পরীক্ষা করা দরকার, যেগুলো কারাগারে নেই। তাই আমরা উনাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে টেস্ট করার জন্য অনুরোধ করেছি। সেই সঙ্গে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়ার জন্যও দাবি জানিয়েছি। বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা নিয়ে চার পৃষ্ঠার একটি সুপারিশমালা কারা কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন বলেও জানান অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী।
খালেদা জিয়াকে কেমন দেখেছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের কথায় কিছুটা জড়তা আছে, তবে কমিউনিকেশন করতে পারছেন।’
বিকাল ৪ টায় কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকীর সঙ্গে ছিলেন নিউরো মেডিসিনের অধ্যাপক সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমান, চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এবং কার্ডিওলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ মামুন এই চার চিকিৎসক প্রধান ফটক দিয়ে কারাগারে প্রবেশ করেন।
চার মাস ধরে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন গুরুতর অসুস্থ হলেও সরকার তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না বলে তার দলের নেতারা অভিযোগ করে আসছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য পাঁচ দফা আবেদন জানানোর পর এই প্রথম অনুমতি পেলেন।
শুক্রবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, নিকট আত্মীয়রা দেশনেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তার (খালেদা জিয়া) সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা হৃদয়বিদারক। স্বজনরা বলেছেন, ৫ জুন দেশনেত্রী দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। তিন সপ্তাহ ধরে তিনি ভীষণ জ্বরে ভুগছেন, যা কোনোভাবেই থামছে না। দলের চেয়ারপারসনের সুচিকিৎসার দাবিতে রোববার সারা দেশে জেলা-মহানগরে ও ঢাকায় থানায় থানায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনেরও কথা রয়েছে বিএনপির।
মার্চের শেষে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে বিএনপির উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে তার চিকিৎসায় একটি বিশেষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করে সরকার। ১ এপ্রিল স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গঠিত বিশেষ মেডিকেল বোর্ড কারাগারে গিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। বোর্ডের সদস্যরা হলেন- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক মো. শামছুজ্জামান (অর্থোপেডিকস), অধ্যাপক মনসুর হাবীব (নিউরোলজি), অধ্যাপক টিটু মিয়া (মেডিসিন) ও সোহেলী রহমান (ফিজিক্যাল মেডিসিন)।
এই বোর্ডের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, খালেদা জিয়া অসুস্থ হলেও তা গুরুতর নয়। ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া পুরনো ঢাকার কারাগারে বন্দি আছেন।
১১০১ চিকিৎসকের বিবৃতি: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ১১০১ চিকিৎসক। এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, কারা কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা নিয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন। খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব তার সুচিকিৎসার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর ৪ বার চিঠি দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বর্তমানে তিনি গুরুতর অসুস্থ। প্রতিরাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। কাশি ও জ্বর নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ডান চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছে। সার্ভিক্যাল স্পন্ডিলাইটিস রোগের ভয়াবহতার কারণে বাম হাত ধীরে ধীরে অবস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কোমরের সমস্যার কারণে তার শরীরের বাম পাশ ও বাম পায়ের তীব্র ব্যথা ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামছে। তিনি হাঁটাচলাও করতে পারছেন না।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন- অধ্যাপক ডা. মবিন খান, অধ্যাপক ডা. বায়েছ ভূঁইয়া, অধ্যাপক ডা. সিরাজউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক ডা. আব্দুল মান্নান মিয়া, অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান মোল্লা, অধ্যাপক ডা. এ এস এম এ রায়হান, অধ্যাপক ডা. ফিরোজা বেগম, অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. খাদিজা বেগম, অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক, অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন, অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
পূর্ববর্তী পোস্ট