দেবহাটা ব্যুরো: বিশ্বের তামাক ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার জনিত অসংক্রামক রোগের প্রকোপ দিন দিন বেড়ে চলেছে। তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে চিকিৎসা ব্যয় বহুগুনে বেড়ে গেছে যা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিশাল বোঝা। গত শুক্রবার ৮ জুন ২০১৮ তারিখে শ্যামলীস্থ ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের সভাকক্ষে আয়োজিত বাজেটে তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রতিক্রিয়ায় বক্তারা একথা বলেন। বক্তারা আরো বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যে সব রাজস্ব প্রস্তাবনা করা হয়েছে সেগুলোর কার্যকারিতা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। বাজেট প্রস্তাবনা দেখে মনে হয়েছে তামাক কর প্রস্তাবনার তামাক কোম্পানী ও ব্যবসায়ীদের বেশ প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে বিড়ির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর রাজস্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হলে সরকারকে তামাক ব্যবসায়ীদের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে মূলবক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের প্রধান ইকবাল মাসুদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সমন্বয়কারী মোখলেছুর রহমান, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাহফিদা দিনা রুবাইয়া, মানসিক স্বাস্থ্য কার্যক্রমের সমন্বয়কারী আমির হোসেন ও নারী মাদকাসক্তি কার্যক্রমের প্রোগ্রাম অফিসার উম্মে জান্নাত প্রমূখ। এবারের বাজেটে বিদেশী তামাক কোম্পানী গুলোকে ব্যাবসা প্রসারে সুবিধা করে দেবে কারন দামি সিগারেটের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫% অপরিবর্তিত থাকছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সাথে সামজ্ঞস্য না রেখে তামাক কর নির্ধারন করা হয়েছে।যা বাস্তবিক কোন প্রভাব পড়বে না। বিড়ির ব্যবহার উল্লেযোগ্যভাবে কমানোর জন্য এর উপর উচ্চহারে কর বৃদ্ধির দাবী গত কয়েক বছর ধরে জোরেশোরেই উত্থাপিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে এ বছর বাজেট ঘোষণার আগে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এবং বাজেট বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে সংশিষ্ট একাধিক ব্যক্তি ও মাননীয় অর্থ মন্ত্রী নিজে ইতিবাচক আশ্বাসও শুনিয়েছিলেন। মাননীয় অর্থ মন্ত্রী জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে বিড়ি কোম্পানী বন্ধের কথাও শুনিয়েছিলেন। কিন্তু বাজেটে তার কোন প্রতিফলন প্রলক্ষিত হয়নি। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্য রপ্তানি উৎসাহিত করার জন্য ২৫% রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার জনস্বাস্থ্য বিরোধী পদক্ষেপ বলে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো মনে করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে সবচেয়ে কম দামে সিগারেট পাওয়া যায় এমন তিনটি দেশের মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। গত ২০১৬ সালের ৩০-৩১ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’ শীর্ষক সাউথ এশিয়ান স্পিকার’স সামিট এর সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তামাকের উপর বর্তমান শুল্ক-কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক-নীতি গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন যাতে এখাতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাকপণ্যের ব্যবহার হ্রাস পায়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় বলা যায় ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা বাস্তবায়নে এই বাজেট কোন ভূমিকা রাখবে না। তাই তামাক বিরোধী ও উন্নয়ন সংগঠন হিসেবে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন প্রস্তাবিত বাজেট সংশোধন ছাড়া পাশ না করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সকল সংসদকে অনুরোধ জানানো হয়।
প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক কোম্পানি সুবিধা পাওয়ায় তামাক নিয়ন্ত্রণ উপেক্ষিত
পূর্ববর্তী পোস্ট