খেলার খবর: রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম খেলায় সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেই দুর্দান্ত খেলা শুরু করে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। ফলস্বরুপ ম্যাচ শুরুর ১৯ মিনিটের মাথায় প্রথম সুইজারল্যান্ডের জালে বল পাঠান ব্রাজিল তারকা কৌতিনহো। তবে বিরতিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত উভয়পক্ষের কেউ আর গোল করেত পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে খেলার ৪৯ মিনিটে কর্ণারের শর্টে হেড করে ব্রাজিলের জালে বল পাঠান সুইজারল্যান্ডের স্তেভেন জুবার। এ গোলের মাধ্যমে খেলার সমতায় ফিরে সুইজারল্যান্ড। এরপরই ব্রাজিল একাধিববার গোল করার সুযোগ পেলেও গোল করতে পারেনি কেউ। না, ব্রাজিল হারেনি। জিতেনি সুইজারল্যান্ডও। ফলাফল ১-১ গোলে ড্র দুই দলের ম্যাচ।
দেশ-বিদেশে ব্রাজিল আর্জেন্টিনা দলের সবচেয়ে বেশি সাপোর্টার রয়েছে। বিশ্বকাপ খেলায় এবারই প্রথম চান্স পাওয়া দুর্বল আইসল্যান্ডে সাথে ড্র করে মাঠ ছাড়ায় আর্জেন্টিনা ভক্তরা হতাশ হয়েছে। আর্জেন্টিনা তাদের ভক্তদের যেমন হতাশ করেছে। ব্রাজিলের খেলোয়াররাও হতাশ করেছে ভক্তদের। সুইজারল্যান্ডের সাথে ড্র করেই মাঠ ছেড়েছে ব্রাজিলও।
রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে হট ফেভারিট মানছিল সবাই। তাদের ওপর প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বি। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই হোচট খেল নেইমার, মার্সেলো, কুতিনহোরা। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয় না পাওয়ায় বড় আক্ষেপ তাদের।
ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট ধরে রেখেছিল ব্রাজিল। ১১ মিনিটে পাওলিনিয়োর শট ফিরিয়ে দেন সুইস গোল রক্ষক। এরপর নেইমার, জেসুসদের সাজানো আক্রমণগুলো বারবার ফিরে আসছিল সুইজারল্যান্ডের রক্ষণ দূর্গ থেকে। ছোট পাসে কাজ না হওয়ায় ফিলিপ কুতিনহো বড় শটের পরিকল্পনা নেন। প্রথম শটেই সাফল্য। ১৯ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠান কুতিনহো। ২৬ বছর বয়সী বার্সেলোনার এ মিডফিল্ডারের শট ঝাপিয়েও বাঁচাতে পারেননি গোল রক্ষক।
বক্সের বাইরে থেকে ব্রাজিলের গোলের রেকর্ড বেশ ঈর্ষণীয়। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর বক্সের বাইরে থেকে ব্রাজিল মোট ৩৭ গোল করেছে। অন্যান্য দলগুলোর থেকে ১১ গোল বেশি সেলেকাওদের।
কুতিনহোর গোলে লিড নিয়ে বিরতিতে যায় ব্রাজিল। বিরতিতে একটি পরিসংখ্যান ব্রাজিলকে বেশ আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। প্রথমার্ধে লিড নেয়া শেষ ৩৫ ম্যাচের ৩৪টিই জিতেছিল ব্রাজিল। রবিবার (১৭ জুন) ব্যর্থতার তালিকায় যোগ হলো আরেকটি সংখ্যা।
ম্যাচের ৫০ মিনিটে সুইজারল্যান্ডকে সমতায় ফেরান স্টিভেন জুভের। জেরদার শাকিরির নেওয়া কর্ণার কিক থেকে হেড দিয়ে বল লক্ষ্যভেদ করেন ২৬ বছর বয়সী জুভের। জুভের জাতীয় দলের হয়ে শেষ ৬ ম্যাচের ৬টি গোলেই সরাসরিভাবে অবদান রেখেছেন। ৬ ম্যাচে ৪টি গোল নিজে করেছেন। অ্যাসিস্ট করেছেন ২টি।
এরপর বহু আক্রমণে সুইস রক্ষণ দূর্গ ব্যস্ত রাখলেও গোল পায়নি ব্রাজিল। কোনোভাবেই সুইস জাল খুঁজে পায়নি পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
ম্যাচ ড্র হলেও রেফারির একটি সিদ্ধান্তে হতাশ করেছে ব্রাজিলিয়ানদের। ৭৩ মিনিটে নেইমারের বাড়ানো পাসে বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকেন জেসুস। তাকে আটকে রাখেন আকিনঝি। এক পর্যায়ে পড়েও যান জেসুস। নিশ্চিত ফাউল চোখ এড়িয়ে যায় মেক্সিকান রেফারি চেসার রামোসের। ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা ভিডিও এসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভার) প্রযুক্তির আবেদন করলেও তা নাকোচ করে দেন প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করতে নামা চেসার রামোস।
রেফারির সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া ছাড়া ওই সময়টায় কিছু করার ছিল না ব্রাজিলের। শেষ পর্যন্ত ওই আক্ষেপই হয়তো করছে তিতের শিষ্যরা।
১৯৭৮ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জিতেনি ব্রাজিল। সেবারও সুইডেনের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছিল সেলেকাওরা। এরপর নয়টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই জয় ছিল ব্রাজিলের। কিন্তু এবার পারল না নেইমাররা। হেক্সা মিশনে রাশিয়ায় আসা ব্রাজিল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তো?
অপরদিকে, ব্রাজিলের বিপক্ষে ড্র করে ইতিহাস গড়েছে সুইজারল্যান্ড। ব্রাজিল ম্যাচসহ সবশেষ ১০ ম্যাচের মধ্যে তারা একটিতেও হারেনি।
রবিবারের (১৭ জুন) ম্যাচের আগে ৯টি ম্যাচের ৯টিতে জিতেছে ইউরোপের এ দেশ। এর আগে তারা পর্তুগালকে ২-০ গোলে, হাঙ্গেরিকে ৩-২ গোলে, অ্যান্ডোরাকে ২-১ গোলে, আইসল্যান্ডকে ২-০ গোলে, লাটভিয়াকে ১-০ গোলে, দ্বিতীয় বারের সাক্ষাতে আবারও আইসল্যান্ডকে ২-০ গোলে, অ্যান্ডোরাকে ৩-০ গোলে, লাটভিয়াকে ৩-০ গোলে দ্বিতীয়বার এবং হাঙ্গেরিকে ৫-২ গোলে দ্বিতীয়বার হারিয়েছিল।
আর রাশিয়া বিশ্বকাপে রবিবারের (১৭ জুন) রাতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেইমার-জেসুসদের রুখে দিয়ে অপরাজিত থাকল দলটি।