খেলার খবর: ব্যর্থতা ও অন্তঃর্দ্বন্দ্বে শেষ হয়েছে আর্জেন্টিনার রাশিয়া বিশ্বকাপ মিশন। বিশ্ব সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির জন্য ছিল দুঃস্বপ্নের এক বিশ্বকাপ। আর ম্যারাডোনার উত্তরসূরিদের এই ব্যর্থতার পেছনে নাকি প্রধান কারণ ছিল দলের মধ্যে অন্তঃর্দ্বন্দ্ব।
আর্জেন্টিনার একজন গণমাধ্যমকর্মীর দাবি সত্যি হলে, বিশ্বকাপে কোচ হোর্হে সাম্পাওলি এবং তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসির সম্পর্ক খুবই তিক্ত হয়ে পড়েছিল। নিজের লেখা এক বইতে এসব তথ্য প্রকাশ করেছেন ওই সাংবাদিক।
ক্রোয়েশিয়ার কাছে বড় ব্যবধানে হারের পরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার আতঙ্ক তাড়া করছিল আর্জেন্টিনাকে। সেই ম্যাচের পরেই নাকি মেসি এবং হাভিয়ের মাসচেরানো মিলে কোচ এবং তার দুই সহকারীকে নিয়ে বৈঠক করার ডাক দেন। মেসিদের ডাকা বৈঠকে সাম্পাওলি খুব মন থেকে বসতে চেয়েছিলেন, বলা যাচ্ছে না।
আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থার প্রধান ক্লদিয়ো তাপিয়া ফুটবলারদের এই বিদ্রোহের কথা জানতেন। তাকে জানিয়েই মেসি এবং মাসচেরানো কোচকে নিয়ে বৈঠক করতে যান বলে বইয়ে দাবি করা হয়েছে। এবং, ক্লদিয়ো নাকি সাম্পাওলিকে বলেই দেন, ফুটবলারদের কথা শুনতে হবে। তার পরেই আর বৈঠকে আসা ছাড়া উপায় ছিল না কোচের।
আর্জেন্টিনা শিবিরের পরিস্থিতি তখন ভয়ানক বলে বইয়ে দাবি করা হয়েছে। সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে কোচ এবং ফুটবলারদের সম্পর্ক। মেসি এবং মাসচেরানো বৈঠকে কোচের সামনে তাদের বিরক্তি প্রকাশ করতে বাকি রাখেননি বলে বইয়ে লেখা হয়েছে।
মেসি কোচের মুখের উপরে বলেন, ‘আমরা যা বলছি, তার উল্টোটা হচ্ছে। দলের মধ্যে কেউ তোমাকে নিয়ে খুশি নয়। এ ব্যাপারে তোমার বক্তব্য জানতে চাই।’
বইয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, সাম্পাওলি তখন মেসির কাছে জানতে চান, ‘কোন ব্যাপারে আমি বক্তব্য দেব?’
মেসি এবং মাসচেরানোর তখন পাল্টা জবাব, ‘সব ব্যাপারেই দিতে হবে। কেন এমন হচ্ছে? দলে কেউ তোমাকে আর বিশ্বাস করছে না…।’
বইয়ে বর্ণনা করা ঘটনা সত্যি হলে, সেই জরুরি বৈঠকে তুমুল বাগ্যুদ্ধই হয় কোচ সাম্পাওলির সঙ্গে মেসিদের। দলের প্রতিনিধি হিসেবেই তারা দুজনে গিয়েছিলেন কোচের সঙ্গে দেখা করতে এবং সরাসরি বলতে দ্বিধা করেননি যে, কেউ আর তাকে পছন্দ করছে না।
সাম্পাওলিকে আরও একটি ব্যাপারে কড়া কথা শুনিয়েছিলেন মেসি বলে বইয়ে দাবি করা হয়েছে। দেখা গিয়েছিল, সাইডলাইনের ধারে আসা মেসির কাছে বদলি হিসেবে কাকে নামাবেন, তা জানতে চাইছেন সাম্পাওলি। এটা নিয়েও ক্ষুব্ধ ছিলেন মেসি। এই প্রসঙ্গ টেনে মেসি কোচকে বলেন, ‘কোন খেলোয়াড়কে আমি চাই আর কাকে চাই না সেটা আমার কাছে ১০ বার করে জানতে চেয়েছ কেন? কখনও কোনো খেলোয়াড়ের নাম বলিনি। তা হলে আচমকা কেন এই প্রশ্ন?’
উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের জেরে সাম্পাওলির এক সহকারী তৎক্ষণাৎ পদত্যাগ করতে চান। কিন্তু কোচ সাম্পাওলিই তাকে থামান। সতীর্থকে বলেন যে, আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। এখন এ সব করতে গেলে বিতর্ক আরও বেড়ে যাবে। রাশিয়ায় ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারের পরে ফুটবলারদের সঙ্গে সাম্পাওলির একটি জরুরি বৈঠকের খবর নিয়ে ফুটবল বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তখন ফুটবলাররা এবং আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থা জানিয়েছিল, পুরোটাই মিডিয়ার ফাঁদা গল্প।