দেশের খবর: দেশব্যাপী এখন আলোচনার শীর্ষে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের হাসি। জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের চালকের রেষারেষির জেরে রবিবার (২৯ জুলাই) রাজধানীতে বিমানবন্দর সড়কে রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। ‘পরিবহন শ্রমিক নেতা হিসেবে নৌপরিবহনমন্ত্রীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বাসচালক-হেলপাররা প্রতিনিয়ত স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে’—এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি হাসতে হাসতে জবাব দিয়েছিলেন, ‘আজকের বিষয়ের সঙ্গে এটি রিলেটেড নয়’ বলেই। হাসির এই দৃশ্যসহ সংবাদটি পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ওঠে সমালোচনার ঝড়ও।
এঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার শাজাহান খানকে সংশোধন হওয়ার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে সংযত হয়ে কথা বলারও পরামর্শ দেন বলে জানা গেছে।
একটি সূত্র বলেছে, প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছেন, ‘কোথায় কখন হাসতে হয়, তাও জানেন না?’
বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার সংবাদ শোনার পরেও নৌমন্ত্রীর মুখের এই হাসি দেখে অনেকেই অবাক হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি দুঃখ প্রকাশ করতে পারতেন। যেখানে এই ঘটনায় মন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ করার কথা, সেখানে তিনি উল্টো হাসলেন। এ কী করে সম্ভব? তিনি কী সুস্থ আছেন?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের একজন সিনিয়র মন্ত্রী বলেন, ‘দাঁত বের করে হাসলেই হয় না। হাসার স্থান-কাল-পাত্র বুঝতে হয়।’
সোমবার (৩০ জুলাই) এ সম্পর্কে জানতে চাইলে শাজাহান খান নিজে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সবসময়ই হাসি, আমার কালো মুখ কেউ দেখেনি। এটা কি দোষের?’
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাংবাদিক মিলটন আনোয়ার তার দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘একটি হাসি সারা জাতির অপমান।’
মো. মাহবুব আলম সরকার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমি বড়পুকুরিয়ার কয়লা দিয়ে দাঁত মাজি। তাই তো আমার এত সুন্দর হাসি।’
মিলন খান নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘দুই শিক্ষার্থীর প্রাণ গেলো, আর একমন্ত্রী দাঁত কেলিয়ে বিবৃতি দিলো! জনগণ কেন এদের ভোট দেয়? আবার মন্ত্রী হয়!’
সাংবাদিক আজাদ সুমন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা পিষ্ট হয় বাসচাপায় আর শাজাহান কাকায় হাসে।’
রাজিউর রহমান রুমি লিখেছেন, ‘অন্যের কষ্টে যাদের মুখে হাসি, তারা দেশি না প্রবাসী?
নৌমন্ত্রীর হাসি প্রসেঙ্গ নিহত ছাত্রী মিমের বাবা জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ‘কাল শুনলাম, মন্ত্রী শাজাহান খান নাকি বলেছেন, ভারতে ৩৩ জন মারা গেছে, সেটা নিয়ে ওখানে এত হইচই হয় না, কথা বলে না। আর বাংলাদেশে দু’জন মারা গেছে, সেইটা নিয়ে এত কথা? মোবাইলে দেখলাম উনি হাসতেছিলেন। ক্যামনে পারলেন এন ঘটনায় এভাবে হাসতে হাসতে কথা বলতে? তার কাছে দুই জন মানুষ মরে যাওয়াটা কেবল সংখ্যা?’
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা সবসময়ই হাসেন। এটি জনগণকে খুশি করার জন্য। কিন্তু সেই হাসি অনেক সময় বুমেরাং হয়ে যায়। শাজাহান খানের গতকালের হাসি তাই হয়েছে।’