নিজস্ব প্রতিবেদক : আটশ’ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক সরবরাহকারিকে আটক করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১১টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের বড়বাজারের মাছ পট্টির পদ্মা ফিসের সামনে থেকে ওৎ পেতে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে আটক করে। ধৃত মাদক সরবরাহকারির নাম আরিফুল ইসলাম আরিফ। সে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালি থানার পশ্চিম বাঁশখালি গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক শাহারিয়ার হাসান রাতে গণমাধ্যমকে জানান, আটক আরিফুল ইসলাম আরিফ ঢাকা থেকে ইয়াবা নিয়ে সাতক্ষীরায় সরবরাহ করতে আসবে বলে সেলফোনে যোগাযোগ করে শহরের স¤্রাট প্লাজার বর্তমান চুক্তিভিত্তিক পরিচালক আবু দাউদের সাথে। কিন্তু আবু দাউদ আগেই ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়ে তাদের হেফাজতে ছিল। দাউদের ফোনে ফোন আসলে ডিবি পুলিশ রিসিভ করে দাউদ সেজে কথা বলে সাতক্ষীরায় ইয়াবা আনতে বলে আরিফুলকে। যথারীতি ঢাকা সাতক্ষীরার একটি পরিবহনে উঠে আরিফুল শনিবার সাতক্ষীরায় এসে সকাল ১১টার দিকে বড় বাজারের মাছ পট্টির পদ্মা ফিসের সামনে অপেক্ষা করতে থাকে। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়ে প্যান্টের মধ্যে বিশেষ কায়দায় রক্ষিত ৮শ’ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে।
ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শাহারিয়ার হাসান রাতে আরও জানান, চলতি বছরের ৪ মে চট্টগাম থেকে কুরিয়ারে আসা বিশ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান আটক করা হয়। এসময় ইয়াবা সরবরাহকারি হিসেবে সাত্তার ও নজরুল নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। বিপুল পরিমান ইয়াবার এই চালানের সাথে আটক হওয়া দুই ব্যক্তি জিজ্ঞাসাবাদে স¤্রাট প্লাজার বর্তমান চুক্তিভিত্তিক পরিচালক ও আদালতের কোর্ট জিআরও বিভাগের স্বঘোষিত কর্তা নামে পরিচিত আবু দাউদের নাম প্রকাশ করে। আবু দাউদ মূলত কয়েকজন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে নিজের হাজারো অপরাধ জায়েজ করে যাচ্ছিল। শুধু তাই নয়, আদালত পুলিশের আওতায় একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে কাজ করে প্রশাসনিক কর্মকর্তার মত পুলিশের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে দিন কাটতো দাউদের। তার এই আস্ফালনে অসহায় ছিল পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তারা।
অভিযোগ রয়েছে, শহরের বিলাস বহুল স¤্রাট প্লাজা চুক্তিভিত্তিক ভাড়া নিয়ে সেখানে বসে জেলায় মাদকের ডিলার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছিল এই দাউদ। এসব বিষয় নিয়ে পুলিশের মধ্যে বেশ সরগরম থাকলেও পুলিশ যেন তাকে নাগালে আনতে পারছিল না। সূত্রমতে, এর আগেও ডিবি পুলিশের হাতে দাউদের লোকজন গ্রেপ্তার হলেও বিশেষ তদ্বিরে ছাড়া পেয়ে যায়-এমন গুঞ্জন ছিল সাতক্ষীরা শহরেই। এছাড়াও উক্ত হোটেলে নারীর ব্যবসা ছিল জমজমাট। পুলিশ জানিয়েছে, বিশ হাজার পিস ইয়াবার সাসপেক্ট হিসেবে আবু দাউদকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। এমন সময় তার ফোনে ফোন আসলে ডিবি পুলিশ রিসিভ করে দাউদ সেজে কথা বলার পর ইয়াবার আরও একটি চালান সাতক্ষীরা আসে শনিবার সকালে।
অবশেষে জিজ্ঞাসাবাদ করে দাউদকে বিশ হাজার পিস ইয়াবার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। অপরদিকে শনিবার আটক ৮শ’ পিস ইয়াবার নতুন মামলায় তাকে আসামী করে আরও একটি মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমান সময়ে দাউদ পুলিশের চোখে এই জেলার মাদকের ডিলার হিসেবে চিহ্নিত বলে জানায়। একই সাথে মাদকের ডিপো হিসেবে গোপন কারবারি চলছিল স¤্রাট প্লাজায়, দাউদকে অতি দ্রুত রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক ঘটনার রসহ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছে পুলিশ।
বর্তমান পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান সাতক্ষীরায় যোগদানের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেস ব্রিফিং করে মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। এরই প্রক্রিয়া হিসেবে জেলায় মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।
তবে রাতে পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান অনেকটাই অভিমান করে বললেন, জেলায় মাদকের কারা ডিলার, কারা গফফাদার তা সাংবাদিকরাই বেশি জানে। আমি সহযোগিতা চেয়েছিলাম বা তথ্য চেয়ে ছিলাম সাংবাদিকদের কাছে। কিন্তু তেমন কোন তথ্য আমি পাইনি। এসময় তিনি বলেন, জেলায় মাদকের ডিপো এবং গডফাদার হিসেবে আবু দাউদের নাম যখন আমাদের হাতে আসে তখন তার সম্পর্কে যাচাই বাছাই এবং তথ্য ভিত্তিক প্রমানপত্র হাতে নিয়ে দাউদকে গ্রেপ্তার করি। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য আসবে বলে তিনি মনে করেন। একই সাথে বলেন, এই দাউদ এত বড় মাদকের ডিলার অথচ তার নামে একটা মাদকের মামলা নেই। এমন অনেক বড় বড় গডফাদার এই জেলায় রয়েছে। নিশ্চিত করে বলতে চাই এসব বড় বড় গডফাদারদের রক্ষা নেই।
সাতক্ষীরার মাদক সম্রাট আবু দাউদ পুলিশের খাচায়!
পূর্ববর্তী পোস্ট