চেহারায় তিনি আদ্যপান্ত একজন পুরুষ। কিন্তু মনটা একটু অন্যরকম। তার মধ্যে দয়া, মায়া, মমতা, আচার, আচরণ অনেকটাই মেয়েদের মতো। স্বভাব চরিত্রেও তিনি মেয়েদের সমান। কিন্তু তিনি পুরুষ। আর সেজন্যই নিজের এই সত্ত্বা সব সময় তাকে সমাজের কাছে লুকিয়ে রাখতে হয়েছে। কখনও কাউকে জানতে দিতে চাননি যে তিনি পুরুষ শরীরে একজন মেয়ে।
প্রায় একশোর কাছাকাছি ম্যাচে তিনি রেফারি হিসেবে নেমেছেন। তখন তার নাম ছিল নিক। পুরুষদের ম্যাচে তিনি দক্ষতার সঙ্গে রেফারিং করেছেন একটা সময়। কিন্তু কোথাও যেন মনে শান্তি ছিল না। কারণ, নিজের আসল সত্ত্বাটাকে তিনি সমাজের সামনে তুলে ধরতে পারছিলেন না।
শেষমেশ জীবনে একখানা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন নিক। রূপান্তর করে নিক থেকে হয়ে গেলেন লুসি ক্লার্ক। তবে নিজের পেশা পাল্টাতে চান না তিনি। কারণ, ফুটবল অন্ত প্রাণ ছিল নিক। এবার মেয়েদের ফুটবলে রেফারিং করতে দেখা যাবে লুসিকে। এক সময়ের নিক এবার লুসি নামে মাঠে নামবেন। বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম কোনও তৃতীয় লিঙ্গের রেফারি মাঠে নামবেন। ছেলেদের থেকে মেয়েদের ফুটবলে আসতে পেরে লুসি কিন্তু এখন প্রচণ্ড খুশি।
লুসির তিন সন্তান রয়েছে। মেয়েদের সঙ্গে সঙ্গে লুসি ছেলেদের ম্যাচেও রেফারিং করতে চাইছেন। বলছেন, আশা করব ফুটবল সমর্থকরা আমাকে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেবেন। আমি যা তাই জন্য আমাকে গ্রহণ করবেন। নিজের সত্ত্বাকে জীবনের বেশির ভাগ সময় লুকিয়ে রেখেছি আমি। এতদিন পর নিজেকে মেলে ধরতে পেরে আমার দারুণ লাগছে। আমি জানি, মাঠে নামলে অনেক ফুটবল সমর্থক আমাকে টিটকিরি করতে পারেন। আমার সেসব নিয়ে কোনও আক্ষেপ বা অভিযোগ থাকবে না। নিজের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছি।
২০১৪ সালে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন নিয়ম করেছে, তৃতীয় লিঙ্গের কেউ ফুটবলে আসতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া যাবে না। তাই লুসির রেফারিং নিয়ে আর কোনও সমস্যা নেই। বহু বছর আগে এক রাতে স্ত্রীকে নিজের সত্ত্বার কথা জানিয়েছিলেন নিক। স্ত্রী তাকে বুঝেছিলেন। তারপর থেকে স্ত্রী বরাবর তার পাশে থেকেছেন বলে জানালেন নিক।