দেশের খবর: বর্তমান সরকারকে এবার বিদায় নিতেই হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বলেছেন, সরকার যতই ‘ষড়যন্ত্র’, ‘অপচেষ্টা’ ও ‘অপলাপ’ করুন, কোনো কিছুতেই আর কাজ হবে না।
রবিবার (২ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এমন কথা বলেন। আগের দিন এই কার্যালয়ের বাইরে সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করে দলটি আর এ কারণে নেতা-কর্মীরা বেশ উজ্জীবিত।
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতা বলেন, ‘যতই ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা ও অপলাপ করুন না কেন আপনাদের এবার বিদায় নিতেই হবে। অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙে নির্বাচন দিতে হবে, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে, নির্বাচন নিয়ে সংবিধানের দোহাই দিয়ে কোন গড়িমসি চলবে না।’
সংবিধানের অনুযায়ী নির্বাচন হবে-আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যকে অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘জনগণ আওয়ামী লীগের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে।’
‘গতকালের জনসভায় বিপুল মানুষের সমাগমেই প্রমাণিত হয়েছে জনগণ এ সরকারকে আর চায় না।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্দলীয় সরকারের বিকল্প নেই দাবি করে রিজভী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী ভোট হবে- ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।
‘নির্বাচন নিয়ে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন আওয়ামী মন্ত্রীরা। সংবিধান তো পরিবর্তন করেছেন আপনারা। আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন বাতিলের মাধ্যমে আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন।’
‘সংবিধান সংশোধন করা যায়-যেমনটি ক্ষমতাসীনরা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আপনারা কীভাবে বাদ দিয়েছেন, আপনারা যেভাবে বাদ দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই আবার তা সংবিধানের সংযোজন করা সম্ভব।’
‘জনগণের ভোট জনগণ দিতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কোন বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না। শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচনের শত্রু পক্ষ। তার অধীনে নির্বাচনের অর্থই হচ্ছে ভোটারদের ভোটাধিকার হরণ।’
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন- ইভিএমকে ‘নীলনকশা’ দাবি করে রিজভী বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য স্বল্প সংখ্যক দেশে যারা ইভিএম চালু করেছিল তারাও এ পদ্ধতি নিষিদ্ধ করেছে। অথচ সকল প্রতিবাদ উপেক্ষা করে কেন এ গণবিরোধী সরকার ইভিএম মেশিন দিয়ে ভোট করতে চায়, সেটি এখন জনগণ টের পেয়ে গেছে। ’
‘বিশ্বব্যাপী ইভিএম নিয়ে সন্দেহপ্রবণ এ মাধ্যম বন্ধ করে দিচ্ছে তখন বাংলাদেশের ভোটারবিহীন সরকার এ মেশিন চালু করতে এতো উৎসাহী কেন তা সুস্পষ্ট। এক শুভঙ্করের ফাঁক দিয়ে তিনি বাজিমাত করতে চান। তবে তাঁর দুরভিসন্ধি জনগণের কাছে ধরা পড়ে গেছে। ভোট ডাকাতির বিপক্ষে ও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষেই বাংলাদেশের জনগণ।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিকে আইনি লড়াইয়ে সরকার বাধা দেবে না বলে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়েও কথা বলেন রিজভী। বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন বারবার বাধাগ্রস্ত করছে সরকার। তিনি একের পর এক মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও আবার তা নানা কায়দায় আটকে দিচ্ছে সরকার। সরকারের নির্দেশেই বেগম জিয়া কারাগারে আটকে আছে।’
‘বেগম জিয়া সুবিচারে নয় প্রতিহিংসামূলক সরকারি বিচারে কারাবন্দি। তার কারাবন্দিত্ব শুধুমাত্র সরকারের প্রতিহিংসার শিকারে।’
আগের দিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার, বাড়িতে-বাড়িতে হানা ও জনসভায় আসার পথে ব্যাপকভাবে বাধা দিয়েছে বলেও অভিযোগ কর হয় সংবাদ সম্মেলনে। গ্রেফতারকৃতদের মুক্তিও দাবি করেন রিজভী।