খেলার খবর: বিরাট কোহলি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আবারও। প্রতিরোধ গড়েছিলেন অজিঙ্কা রাহানে। কিন্তু এই দুজনের লড়াই শেষ হতেই যেন শেষ ভারতীয় ব্যাটিংয়ের দম। মইন আলির স্পিন ভেঙে দিল প্রতিপক্ষের মেরুদণ্ড। সঙ্গত ধরলেন পেসাররাও। দুর্দান্ত এক জয়ে ইংল্যান্ড নিশ্চিত করল সিরিজ জয়ও।
সাউথ্যাম্পটন টেস্টে ভারতকে ৬০ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের চারটি শেষেই ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে জিতে নিয়েছে সিরিজও।
টেস্টের চতুর্থ দিনে রোববার জয়ের জন্য ভারতকে ২৪৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ইংলিশরা। কোহলিরা থমকে যান ১৮৪ রানেই।
ভারতের এই রানেও শতরানের জুটি গড়েছেন কোহলি ও রাহানে। কিন্তু বাকিরা হতাশ করেছেন দলকে।
ইংল্যান্ড দিন শুরু করেছিল দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেটে ২৬০ রান নিয়ে। শেষ দুই উইকেটে যোগ করতে পারে তারা আর কেবল ১১ রান।
শুরুতেই স্টুয়ার্ট ব্রডকে ফিরিয়ে মোহাম্মদ শামি ধরেন চতুর্থ শিকার। ৪৬ রানে স্যাম কারানের রান আউটে শেষ হয় ইনিংস।
লক্ষ্য আড়াইশর নিচে। কিন্তু উইকেটের অবস্থা আর শেষ ইনিংসের চাপ মিলিয়ে কাজটা ছিল কঠিন। সেটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে ভারতের রান তাড়ার শুরুতেই। ইংলিশদের দারুণ বোলিংয়ে এলোমেলো হয়ে যায় টপ অর্ডার।
স্টুয়ার্ট ব্রডের নিচু হওয়া বলে শূন্য রানেই বোল্ড ওপেনার লোকেশ রাহুল। জেমস অ্যান্ডারসনের দারুণ ডেলিভারি ফেরায় প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান চেতেশ্বর পুজারাকে। আরেক ওপেনার শিখর ধাওয়ানও অ্যান্ডারসনের শিকার। ভারতের রান তখন ৩ উইকেটে ২২।
সেই বিপর্যয় থেকেই দারুণ ব্যাটিংয়ে জয়ের আশা জাগান কোহলি ও রাহানে। জুটির শুরুতে দুজনই বেশ ভুগেছেন। তবে হাল না ছেড়ে লড়াই করেছেন। সময়ের সঙ্গে নিয়েছেন নিয়ন্ত্রণ। ভারত তখন ছিল জয়ের পথে। জুটির রান ছাড়িয়ে যায় একশ। কোহলি পেরিয়ে যান সিরিজে ৫০০ রান। প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে স্পর্শ করেন ৪ হাজার টেস্ট রানও।দৃশপটে মইনের আবির্ভাব তখনই। ইংল্যান্ড ও জয়ের মাঝে সবচেয়ে শক্ত দেয়াল হয়ে থাকা কোহলিকে ফেরান ৫৮ রানে। ইংলিশদের উল্লাস বলে দিচ্ছিল, তাদের জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে ওই উইকেটেই।
সময়ে সেটিই সত্যি প্রমাণ হয়। ১৫৯ বলে মাত্র ১ চারে ৫১ রানের ইনিংস খেলা রাহানের প্রতিরোধও ভাঙেন মইন।
প্রথম ইনিংসে ২৯ বলে শূন্য করা রিশাভ পান্ত এবার ছিলেন ভিন্ন রূপে। শুরু থেকেই চেষ্টা করেছেন আক্রমণের। তার ১২ বলে ১৮ রানের ইনিংসও থামিয়েছেন মইন।
৪০ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে ভারত চলে যায় পরাজয়ের কিনারে। শেষ দিকে ২৫ রানের ইনিংসে ব্যবধান কিছুটা কমান রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ছোট স্কোরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের জয়ের ব্যবধানকে তবুও বলতে হবে যথেষ্টই বড়।
প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪টি নিয়ে ম্যাচের সেরা এই টেস্টে দলে ফেরা মইন আলি।
তবে ম্যাচের প্রেক্ষাপটে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না স্যাম কারানের অবদান। প্রথম ইনিংস দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলা ৭৮ রানের ইনিংস, বল হাতে প্রথম ইনিংসে কোহলির উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও ৪৬ রানের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস, আর বল হাতে ভারতের শেষ উইকেট নিয়ে ম্যাচের যবানিকা, তরুণ অলরাউন্ডার কাটিয়েছেন অসাধারণ এক ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৪৬
ভারত ১ম ইনিংস: ২৭৩
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ২৭১
ভারত ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৪৫) ৬৯.৪ ওভারে ১৮৪ (ধাওয়ান ১৭, রাহুল ০, পুজারা ৫, কোহলি ৫৮, রাহানে ৫১, পান্ডিয়া ০, পান্ত ১৮, অশ্বিন ২৫, ইশান্ত ০, শামি ৮, বুমরাহ ০*; অ্যান্ডারসন ২/৩৩, ব্রড ১/২৩, মইন ৪/৭১, স্টোকস ২/৩৪, কারান ১/১, রশিদ ০/২১)।
ফল: ইংল্যান্ড ৬০ রানে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজের ৪টি শেষে ইংল্যান্ড ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: মইন আলি