দেশের খবর: দুর্ঘটনায় শ্রমিক হতাহতের ঘটনায় দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ ও বাধ্যতামূলক উৎসব ভাতা প্রদানসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে পরিবর্তন এনে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন- ২০১৮ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে বৈঠকে বিভিন্ন শ্রম ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের বিধান রেখে খসড়াটির অনুমোদন দেয়া হয়।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সংশোধিত শ্রমআইনে বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্য রয়েছে শ্রমিকদের উৎসব ভাতা বাধ্যতামূলক; কিশোররা কাজ করতে পারবে, শিশুরা নয়; দুর্ঘটনায় কোনও শ্রমিক নিহত হলে তার ক্ষতিপূরণ দ্বিগুণ দিতে হবে।
বাংলাদেশে ২০০৬ সালের শ্রমআইন কার্যকর রয়েছে। বিভিন্ন শ্রম সংস্থা ও শ্রমিক সংগঠনের দাবির মুখে ২০১৩ সালে শ্রমআইন সংশোধন করা হলেও তা যথেষ্ট হয়নি বলে আলোচনা ছিল।
এরপর থেকেই আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), আন্তর্জাতিক ক্রেতা জোট এবং বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন শ্রমআইন ফের সংশোধনের দাবি তোলে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার দেশে-বিদেশে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে। এরপর শ্রমআইন সংশোধনের খসড়া করে তা আইএলওতে পাঠানো হয়। আইএলওর পর্যবেক্ষণ আমলে নিয়ে মালিক, শ্রমিক ও সরকারি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটি আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করে।
প্রচলিত আইনে দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত কারণে শ্রমিকের উত্তরাধিকারীরা এক লাখ টাকা এবং স্থায়ী সম্পূর্ণ অক্ষমতার জন্য এক লাখ ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই ক্ষতিপূরণ বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী, আইএলওসহ সব দেশীয় শ্রমিক সংগঠনের অব্যাহত দাবি ছিল।
নতুন আইনে এই অর্থ দ্বিগুণ করে দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ ২ লাখ টাকা, স্থায়ীভাবে সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে পড়লে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হচ্ছে।
নতুন আইন অনুযায়ী, কেউ যদি শিশুশ্রমিক নিয়োগ করে, তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হবে। ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোররা হালকা কাজ করতে পারবে। আগে ১২ বছরের শিশুরা হালকা কাজের এ সুযোগ পেত।
প্রস্তাবিত আইনে ট্রেড ইউনিয়নের কথাও বলা হয়েছে। আগে ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য ৩০ শতাংশ শ্রমিকের অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। এখন তা কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। আগে ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য ধর্মঘট ডাকার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের মত গ্রহণের বিধান ছিল। এখন সেটা কমিয়ে ৫১ শতাংশ করা হয়েছে।
শ্রম আদালতে মামলা নিষ্পত্তির জন্য (রায়ের সময়) নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রস্তাবিত আইনে ৯০ দিনের মধ্যে রায় দিতে হবে। কোনো কারণে এই ৯০ দিনের মধ্যে রায় দেওয়া না গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এই রায় অবশ্যই দিতে হবে।
প্রস্তাবিত আইনে নারী শ্রমিকদের প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রস্তাবিত আইনে অসদাচরণের জন্য মালিক ও শ্রমিকের আগে যে সাজা ছিল তা কমানো হয়েছে। আগে সাজা ছিল দুই বছর এখন করা হয়েছে এক বছর।
মন্ত্রিসভায় শ্রমআইন- ২০১৮ এর খসড়া অনুমোদন
পূর্ববর্তী পোস্ট