ভিন্ন স্বাদের খবর: চিকিত্সা বিজ্ঞান বা চিকিত্সা শাস্ত্র হল রোগ উপশমের বিজ্ঞান কলা বা শৈলী। মানব শরীর এবং মানব স্বাস্থ্য ভালো রাখার উদ্দেশ্যে রোগ নিরাময় ও রোগ প্রতিষেধক বিষয়ে চিকিত্সা বিজ্ঞানে অধ্যয়ন করা হয় এবং প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন চিকিত্সার প্রমাণগুলো পাওয়া গেছে মিসরীয় ঔষধ, বেবিলিনিয়ান ঔষধ, আয়ুর্বেদিক ঔষধ, ক্লাসিক্যাল চীনা ওষধ, প্রাচীন গ্রিক ঔষধ এবং রোমান ঔষধ থেকে। এর মধ্যে মিসরীয়দের চিকিত্সা জ্ঞানের প্রমাণ পাওয়া গেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরনো নথিতে।
ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেন এর একদল গবেষক এই সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত গবেষণা করে সাড়ে তিন হাজার বছর আগে মিসরীয়দের চিকিত্সা জ্ঞান সম্পর্কে জানিয়েছেন।
মিসরের ইমহোতেপ ছিল প্রথম পরিচিত চিকিত্সক যা ইতিহাসে পাওয়া যায়। ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে প্রাচীনতম মিসরীয় চিকিত্সা পাঠ্যক্রমটি কাহুন গাইনোকোলজিক্যাল প্যাপিরাস নামে পরিচিত যা মূলত গাইনোকোলজিক্যাল রোগের বর্ণনা দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহূত হতো। ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস সার্জারির ওপর প্রথম কাজ করেছিলেন, আর ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে Ebers Papyrus কাজ করেছিলেন যা চিকিত্সা সংক্রান্ত পাঠ্যপুস্তকের অনুরূপ ছিল। ঐ সময়েই মিসরীয় নারীরা গর্ভধারণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে বিশেষ এক ধরনের চিকিত্সা পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। বর্তমান সময়ে যেমন নারীরা আধুনিক ‘কিটস’ দিয়ে গর্ভধারণের বিষয়টি নিশ্চিত হন তেমনি কৌশল অবলম্বন করতেন মিসরীয় নারীরা। গর্ভবতী নারীরা বার্লি এবং ‘ইমার’ (বিশেষ এক ধরনের প্রাচীন ফসল) ফসলের চারার ওপর পৃথকভাবে ‘ইউরিন’ নিঃসরণ করতেন। যদি বার্লি জন্মাতো তাহলে ধরে নেওয়া হতো পুত্রসন্তান হবে। যদি ইমার জন্মাতো তাহলে ধরে নেওয়া হতো কন্যা সন্তান হবে ঐ নারীর। আর যদি দুটি ফসলের কোনটি-ই না জন্মাতো তাহলে নিশ্চিত হওয়া যেতো যে ঐ নারী গর্ভবতী নন। মজার বিষয় হলো, তাদের এই পরীক্ষা পদ্ধতি কোন কুসংস্কার থেকে নয় বরং চিকিত্সা বিজ্ঞানের আলোকেই তারা এটি করতেন। ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেন এর একদল গবেষক মূলত নারীদের গর্ভধারণের পরীক্ষার বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছে।
মিসরীয় চিকিত্সা জ্ঞান নিয়ে অনুসন্ধান করা ডেনমার্কের একজন বিশেষজ্ঞ ১৯৩৯ সালে প্রথম মিসরীয়দের গর্ভধারণের পূর্বাভাসের বিষয়টি মানুষকে জানান। কার্লসবার্গ ফাউন্ডেশনের কাছে থাকা এই ধরনের পরীক্ষার ১৪০০ এর বেশি নমুনা ‘পেপিরি’ নিয়ে কাজ করছে ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেনের ঐ দলটি। এর মধ্যে রয়েছে সাড়ে তিন হাজার বছর আগের কিছু লিখিত নমুনাও। মিসরীয় চিকিত্সা জ্ঞান নিয়ে কাজ করা কার্লসবার্গ ফাউন্ডেশনের প্রধান কিম রাইহোল্ট বলেন, আমরা এমন কিছু তথ্য উপাত্ত নিয়ে কাজ করছি যেগুলো সত্যিই খুব দুর্লভ। এই ১৪০০ ‘পেপিরি’ নমুনার মধ্যে মাত্র ১০ থেকে ১২টি নমুনাই কেবল ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। আর এই ধরনের নতুন কোন তথ্য নতুন আলোর দিশা দেখানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিম রাইহোল্ট বলেন, বিশেষ এই লিখিত নমুনাগুলোর বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। এই লেখাগুলো পুনরুদ্ধার করা এবং এগুলো খুব কম সংখ্যক মানুষ পড়তে পারবে। যে টার্মগুলো সেখানে ব্যবহূত হয়েছে সেগুলো সত্যিই বোঝা দুষ্কর।-সিএনএন