দেশের খবর: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রধান হোতা বলে আদালতে দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
সোমবার (১০ আগস্ট) পুরান ঢাকায় অস্থায়ী ১নং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুর-উদ্দিনের আদালতে আইনে পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপনের সময় এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী মোশাররফ হোসেন কাজল এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, তারেক রহমানই এ হামলার মূল হোতা। সে পেছন থেকে সব কলকাঠি নেড়েছেন। অন্যান্য আসামিদের সকল প্রকার প্রশাসনিক সহায়তা দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে হত্যা ও আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার উদ্দেশ্যে৷ হামলার আগে ঢাকায় ১০টি বৈঠক হয়৷ ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠকগুলো তারেক রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনি পয়েন্টে যুক্তি শেষ না হওয়ায় পরবর্তী যুক্তির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
আলোচিত এ মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আরও ২০ জনের সাফাই সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ওই গ্রেনেড হামলায় দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন নিহত হন।তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন৷ ঐ ঘটনায় হত্যাসহ দু’টি মামলা হয়। পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে বিশেষ এজলাসে মামলা দু’টির বিচার চলছে৷ মামলা দু’টি হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে।
এই হামলার পর ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হয়েছে৷ মামলার আলামত নষ্ট এবং ‘জজ মিয়া’-র সাজানো সাক্ষ্য দিয়ে কল্পকাহিনি ফাঁদার চেষ্টা করা হয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি-র এসপি আব্দুল কাহহার আখন্দ।
২০০৮ সলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর নতুন করে এ মামলার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়৷ ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার মামলার অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় কাহহার আখন্দকে৷ সম্পূরক অভিযোগপত্রে মোট ৫২ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে পলাতক ১৯ জন আর কারাগারে বন্দি ২২ জন৷ জামিনে আছে আটজন।
পলাতক আসামিরা হচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান, চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, ডিজিএফআই-এর সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন আহমদ, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খা।
এছাড়া কারাগরে আটক আছেন, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা মাওলানা তাজ উদ্দিন, মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গির আলম বদর, ইকবাল, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ লোকমান হাওলাদার, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, মুফতি শফিকুর রহমান, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু পলাতক রয়েছেন৷ পলাতক দুই আসামি হুজি সদস্য আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে আটক রয়েছেন বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। তাই এ মামলার আসামির তালিকা থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়।হত্যা মামলার সঙ্গে দায়ের করা একটি বিস্ফোরক মামলার আসামিও একই ব্যক্তির। দু’টি মামলারই বিচার চলছে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে দ্রুত বিচার আদালতে।
এর আগে চলতি সেপ্টেম্বরেই বহুল মামলার রায় হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।