বিদেশের খবর: মিয়ানমারের ক্ষমতাধর সেনাদের অপসারণ করা উচিত বলে মঙ্গলবার উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের তদন্তকারীরা। এর আগে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনাবহিনীর অপরাধের মাত্রা এতটাই বেশি যে তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় দায়ে মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
জাতিসংঘের ৪৪৪ পাতার ওই প্রতিবেদনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের রদবদল এবং দেশ শাসনে তাদের প্রভাব না থাকার আহ্বান জানানো হয়। মিয়ানমারের রাজনীতি থেকে তাদের অপসারণ করা উচিত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিকে শাসন করছে সেনাবাহিনী। পার্লামেন্টের এক চতুর্থাংশ আসন দখল করে রেখেছে সেনারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সীমান্ত এবং প্রতিরক্ষার মতো দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় তাদের হাতে।
জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসামরিক সরকারের নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা করা উচিত। দেশের রাজনীতি থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে অপসারণ করা উচিত।
১৮ মাস ধরে ৮৫০য়ের বেশি সাক্ষাতকার গ্রহণ, ফোনে আলাপের মাধ্যমে এই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘ। মিয়ানমারে ঢুকতে না পারলেও সেখানে কী ঘটেছে তা জানতে ভুক্তভোগিদের পাওয়া কঠিন হয়নি তদন্তকারীদের জন্য।
মিয়ানমার ছেড়ে পালানোর আগে সেখানকার সহিংসতা নিজে দেখেছেন এমন অসংখ্য লোকের কাছ থেকে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া গেছে।
তদন্তকারীরা বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত মোট ৮৭৫ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন, যারা তাদের কাহিনি এর আগে আর কাউকেই বলেননি -তাদের বিবরণকেই সবচেয়ে মূল্যবান বলে গণ্য করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংসহ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়। প্রতিবেদনে ব্যাপকহারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে আনা সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। একই সঙ্গে তারা দাবি করেছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তারা অভিযান চালিয়েছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, সেনাবাহিনীর মধ্যে রদবদল আনা উচিত এবং তা বর্তমান নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই শুরু হওয়া উচিত।