ক্রীড়া ডেস্ক: সিডনিতে বাংলাদেশ দলের ঠিকানা ছিল অ্যাডিনা নরওয়েস্ট অ্যাপার্টমেন্ট হোটেল। এ ধরনের হোটেলে সাধারণ হোটেলের সব সুযোগ-সুবিধা থাকে না। অস্ট্রেলিয়ায় কয়েকটি দিনের জন্য হলেও তাই খেলোয়াড়েরা ফিরে গেলেন পুরোনো দিনে। অনুশীলন, প্রস্তুতি ম্যাচ—এসবের সঙ্গে সিডনি সফর দিয়েছে ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে বুটের স্পাইকস পরিষ্কার করার অভিজ্ঞতাও।মাশরাফি-মুশফিকদের সিডনি পর্ব শেষ। আজ স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় বাংলাদেশ দলের উড়াল দেওয়ার কথা নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের উদ্দেশে। সাড়ে তিন ঘণ্টার ফ্লাইট। এরপর ওয়াঙ্গেরি, বাসে আড়াই ঘণ্টার মতো পথ। ২২ ডিসেম্বর সেখানেই নিউজিল্যান্ড সফরের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচটি খেলবে বাংলাদেশ। কোবহাম ওভালে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড একাদশ।সিডনিতে বাংলাদেশ দল দুটি টি-টোয়েন্টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। সিডনি সিক্সার্সের বিপক্ষে প্রথমটি জিতলেও হেরেছে সিডনি থান্ডারের বিপক্ষে পরেরটিতে। পরশুর ম্যাচে অবশ্য পূর্ণ শক্তির বাংলাদেশ দল খেলানো হয়নি। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাসহ বিশ্রামে ছিলেন সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, তাসকিন আহমেদরা। বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম।স্পটলেস স্টেডিয়ামের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচসহ সিডনির পুরো ক্যাম্প নিয়েই বেশ সন্তুষ্ট মুশফিক। সেখানে অনুশীলন করার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে কাল মুঠোফোনে বললেন, ‘আসল সিরিজে নামার আগে এখানে আমাদের শুরুটা খারাপ হয়নি। বৃষ্টি না হলে আরও ভালো হতে পারত।’ তবে সিডনির বৃষ্টিতে একটা ‘আশীর্বাদ’ও দেখছেন টেস্ট অধিনায়ক, ‘বৃষ্টিতে একদিক দিয়ে আমাদের ভালোও হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা থাকবে। বৃষ্টির কারণে সিডনিতেই সেটা পেয়ে গেলাম।’অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের উইকেটের আচরণে ভালোই পার্থক্য থাকে। তবে মুশফিকের অভিজ্ঞতা এবার একটু অন্য রকম, ‘এখানে প্র্যাকটিসের উইকেটগুলো অনেকটা নিউজিল্যান্ডের উইকেটের মতোই ছিল। আমাদের জন্য তাই প্র্যাকটিসটা ভালো হয়েছে। দুটো প্র্যাকটিস ম্যাচও খেলেছি। সব মিলিয়ে ভালো ক্যাম্প হয়েছে।’ সিডনি পর্ব শেষ। বাংলাদেশ দলের চোখ আপাতত ওয়াঙ্গেরির প্রস্তুতি ম্যাচের দিকে। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে মূল সিরিজে নামার আগে এই ম্যাচটাকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে সবাই। মুশফিকেরও একই কথা, ‘নিউজিল্যান্ডের প্র্যাকটিস ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কন্ডিশনের সঙ্গে আমাদের দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আগেও বলেছি, ওই কন্ডিশনে আমাদের ব্যাটসম্যানদের কাজই বেশি কঠিন হবে। তবে অসম্ভব কিছুই নয়।’সিডনির অনুশীলনে পাওয়া উইকেটই হয়তো এই আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে মুশফিককে। ঢাকায় বসে অস্ট্রেলিয়ার খোঁজখবর যেটুকু রেখেছেন, তাতে আশাবাদী প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনও, ‘প্র্যাকটিসে ওরা আমাদের বেশ ভালো উইকেট দিয়েছে। উইকেটে বাউন্স ছিল, সুইং ছিল। যা শুনেছি তাতে আমাদের ব্যাটিং প্র্যাকটিস ভালো হয়েছে বলেই জানি।’নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে প্রস্তুতি ম্যাচ দুটিরও ইতিবাচক প্রভাব থাকবে বলে আশা মিনহাজুলের, ‘প্রতিদিন প্রায় তিন-চার ঘণ্টা করে অনুশীলন হয়েছে। এটারই বেশি দরকার ছিল। সঙ্গে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলায় আরও ভালো হয়েছে। এখানে হার-জিতটা বড় ছিল না। ওই কন্ডিশনে অভ্যস্ত হওয়াটাই জরুরি ছিল। সে জন্য আমাদের লক্ষ্য ছিল ওখানে যত বেশি সম্ভব অনুশীলন করা।’সিডনিতে গিয়ে ক্যাম্প করার প্রস্তাবটা ছিল কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। কোচের ইচ্ছাতেই প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ক্যাম্পের আয়োজন। ‘অস্ট্রেলিয়ায় প্রস্তুতি কেমন হলো’ প্রশ্নে কোচের মত জানাটাই তাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। হাথুরুসিংহের কাছ থেকে সরাসরি সেটা জানা না গেলেও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান আকরাম খানের বিশ্বাস, ‘তিনি যেভাবে চেয়েছেন আমরা সেভাবেই সবকিছুর ব্যবস্থা করেছি। প্রস্তুতি নিয়ে কোচের খুশিই থাকার কথা।’আর আকরাম নিজে? না, এখনই শেষ কথা বলতে চান না জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। তিনি অপেক্ষা করতে চান নিউজিল্যান্ড সফর শেষ হওয়া পর্যন্ত, ‘আমি মনে করি, ক্যাম্প কেমন হয়েছে তা বোঝা যাবে পারফরম্যান্সে। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে দল কেমন খেলল, সেটাই আসল।’