দেশের খবর: সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বড় পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন। সহকারী শিক্ষকদের চাকরির বয়স আট বছর পূর্ণ হওয়ার পর জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পাবেন। এতে পদোন্নতি পাবেন মোট শিক্ষকদের অর্ধেক। আর শিগগিরই পদোন্নতি পাবেন প্রায় পাঁচ হাজার সহকারী শিক্ষক। পদোন্নতি পাওয়া শিক্ষকদের বেতন স্কেলও দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে উন্নীত হবে। সরকার এর পাশাপাশি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী লাইব্রেরিয়ান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) শিক্ষক ও ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের পদ সৃষ্টিরও উদ্যোগ নিয়েছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৯টি আঞ্চলিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপপরিচালকদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। সেখানে আগামী ৩১ অক্টোবর ২০১৮ সালের মধ্যে যেসব শিক্ষকের চাকরির বয়স আট বছর পূর্ণ হবে, তাঁদের বিভিন্ন কাগজপত্র মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে।
যেসব কাগজপত্র দিতে বলা হয়েছে সেগুলো হলো, হিসাবরক্ষণ অফিস প্রদত্ত চাকরির বিবরণী, নিয়োগপত্র, আত্তীকরণ আদেশ, স্থায়ীকরণ আদেশ, নিয়মিতকরণ আদেশ, যোগদানপত্রের সত্যায়িত কপি, প্রতিষ্ঠানপ্রধানের দেওয়া মামলাসংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র, চাকরির ধারাবাহিকতা ও চাকরিকালের সন্তোষজনক প্রত্যয়নপত্র, বিএড পাস সনদের সত্যায়িত কপি এবং গত পাঁচ বছরের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন।
মাউশি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারা দেশে এখন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ শর কাছাকাছি। তবে এর মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক সদ্য জাতীয় করা। এসব স্কুলে এখনো শিক্ষকদের পদ সৃজন করা হয়নি। তাই আগের ৩৪৮ স্কুলের শিক্ষকরা প্রথমবারের মতো এই পদোন্নতি পাবেন। এসব স্কুলে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে পাঁচ হাজার শিক্ষক সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পাবেন।
মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এই পদোন্নতি শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল, যা এখন শুরু হয়েছে। তবে একবারে এত শিক্ষকের পদোন্নতির তালিকা তৈরি করতে কিছুটা সময় লাগবে। মূলত জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে একটি গ্রেডেশন তালিকা তৈরি করা হবে। সেই তালিকা ধরেই পদোন্নতি দেওয়া হবে। মোট সহকারী শিক্ষকের অর্ধেক সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পাবে। পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নতুন করে পদায়ন দেওয়া হবে না।’
জানা যায়, এত দিন সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে মাত্র অল্প কয়েকজনের সহকারী প্রধান শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুযোগ ঘটত। কিন্তু একটি স্কুলে ২০ জন সহকারী শিক্ষক থাকলেও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ মাত্র দুটি। ফলে বেশির ভাগ শিক্ষককে চাকরিজীবনের পুরোটাই একই পদে চাকরি করতে হতো। এমনকি ৩০ বছর চাকরি করেও পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ ছিল না। এখন সিনিয়র শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষকদের সেই বঞ্চনার অবসান হবে।
সূত্র জানায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি বিধিমালার গেজেট জারি করা হয়। সেখানেই সিনিয়র শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়। সহকারী শিক্ষকের মোট পদের ৫০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে এই পদে যেতে পারবে বলে বলা হয়েছে। সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে আট বছর চাকরির পাশাপাশি ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) বা ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন বা ব্যাচেলর অব অ্যাগ্রিকালচার এডুকেশন ডিগ্রি থাকতে হবে। আর সহকারী শিক্ষক পদকে চাকরিতে প্রবেশ পদ ধরা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষাজীবনে কোনো তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য হবে না।
এ ছাড়া সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন পদ সৃষ্টিরও উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
জানা যায়, বেসরকারি বিদ্যালয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) শিক্ষক ও সহকারী লাইব্রেরিয়ানের পদ থাকলেও সরকারি স্কুলে তা নেই। ফলে বাধ্যতামূলক এই আইসিটি বিষয়টি অন্য কোনো শিক্ষককে অতিরিক্ত হিসেবে পড়াতে হচ্ছে। এ জন্য সরকারি ৩৪৮টি স্কুলে ৫০২ জন আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক, ৩৪৮ জন আইসিটি শিক্ষক এবং ৫০২ জন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এক হাজার ৩৫২টি পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।