দেশের খবর: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সরকারবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সাত দফা ও ১১ লক্ষ্যের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এই খসড়া জাতীয় ঐক্যের শীর্ষ নেতারা চূড়ান্ত করবেন। সে লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার দুই দফা বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার এ বৈঠক হতে পারে বলে জানা গেছে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ নানা জটিলতাই এভাবে বৈঠক বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণ।
সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যের শুরুতে যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক বিকল্পধারা বাংলাদেশের নানান শর্ত ও চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি খুব ভালোভাবে নেয়নি ঐক্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য রাজনৈতিক দল। সর্বশেষ বৈঠকেও জাতীয় নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দাবি উত্থাপন করেন বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান। কিন্তু তার এই দাবির সঙ্গে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা দ্বিমত পোষণ করেন। তাদের বিরোধিতায় তখন বিষয়টি চাপা পড়লেও নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে বিকল্পধারা। আর এই জটিলতার কারণে দুই দফায় শীর্ষ নেতাদের বৈঠক স্থগিত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে দেড়শ’ আসন দিয়ে অন্যান্য আসন যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যে ভাগ করতে চান বিকল্পধারার নেতৃত্ব। তবে যুক্তফ্রন্টের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য এ মুহূর্তে আসন ভাগাভাগির চেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ঐক্য গড়ার বিষয়ে জোর দেয়। একইভাবে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারাও আসন ভাগের চেয়ে দেশে সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিকে প্রাধান্য দিতে চান।
এদিকে, জাতীয় ঐক্যের রূপরেখা আর কর্মসূচি নির্ধারণে গতকাল দিনভর নানা নাটকীয়তায় নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন সংশ্নিষ্ট নেতারা। গণফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়, ড. কামাল হোসেনের বাসায় বৈঠকের বিষয়ে তাকেই কিছু জানায়নি লিয়াজোঁ কমিটি। এ কারণে বৈঠকটি আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় স্থানান্তর হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখানকার বৈঠকও বাতিল করেন নেতারা।
এ বিষয়ে জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব গতকাল রাতে কেবল বৈঠক স্থগিত হওয়ার কথা জানান। তবে জাতীয় ঐক্যের একাধিক সূত্র জানায়, বিকল্পধারার দাবি করা নির্বাচনের আসন বণ্টন নিয়ে কোনো সুরাহা না হওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে এ বৈঠক বয়কট করায় তা আর হয়ে ওঠেনি। আ স ম রবের বাসায় ডাকা বৈঠকে বিকল্পধারাকে দাওয়াত দেওয়া না হলেও এই দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী বৈঠকে যোগ দেবেন বলে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন জটিলতা এড়ানোর জন্য বৈঠকটিই বাতিল করা হয়।
জাতীয় ঐক্য গঠনে চলমান প্রক্রিয়ার শুরুতেই এই টানাপড়েনের বিষয়ে গণফোরামের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, বিষয়টি যুক্তফ্রন্টের সমস্যা। এই জোটের অন্য দল বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে। তার মতে, সুষ্ঠু নির্বাচন ও সুশাসনের দাবিতে তারা ঐক্যবদ্ধ হতে চান। এ ক্ষেত্রে আগেই মন্ত্রী-এমপি নির্ধারণের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।
এ বিষয়ে যুক্তফ্রন্টের কোনো নেতা মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা বিকল্পধারার আচরণে ক্ষুব্ধ হওয়ার কথা জানান।
সূত্র জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া একমত হলেও তারা এখন পর্যন্ত লক্ষ্য ঠিক করতে পারেনি। অভিন্ন দাবি-দাওয়া ঠিক হলেও যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা চান, আগে লক্ষ্য চূড়ান্ত করা, এরপর আন্দোলনে নামা। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গত ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্ট অভিন্নভাবে পাঁচ দফা দাবি ও নয় দফা লক্ষ্য উপস্থাপন করে। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর সমাবেশ করে বিএনপি সাত দফা দাবি ও ১২ দফা লক্ষ্য উপস্থাপন করে। তিন পক্ষের দাবি-দাওয়া কাছাকাছি হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয়- বৃহত্তর ঐক্যের ব্যানারে আন্দোলনে নামার আগে অভিন্ন দাবি ও লক্ষ্য চূড়ান্ত করা হবে।
সূত্র জানায়, এ সিদ্ধান্তের আলোকে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নয়জন নেতার সমন্বয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সদস্যরা প্রথমে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের গুলশানের বাসায় এবং পরদিন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় বৈঠক করেন।
জানা গেছে, বিভিন্ন দাবি ও লক্ষ্যের একটি খসড়া নিয়ে গতকাল ড. কামাল হোসেনের বাসায় জাতীয় ঐক্যের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রথম বৈঠকটি ডাকা হয়, যা পরে আ স ম আবদুর রবের বাসায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির চাপে স্থগিত করতে হয়।
কাল ২০ দলীয় জোটের বৈঠক :সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কর্মসূচি নির্ধারণে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক আহ্বান করেছে বিএনপি। আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে দলের একটি সূত্র জানিয়েছে।