অনলাইন ডেস্ক: ড. কামাল হোসেনের আমন্ত্রণে তার বাসায় এলেও দেখা না পেয়ে ফিরে গেছেন যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী)। শনিবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তারা বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় এলেও তিনি ওই সময় বাসায় ছিলেন না। এ ঘটনার পর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ভাঙনের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ শনিবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছে উভয় পক্ষ। বি.চৌধুরীর পক্ষে বারিধারায় তার বাসভবনে এবং ড. কামালসহ বাকি নেতাদের পক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন দুটি অনুষ্ঠিত হবে।
ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসা থেকে ফিরে যাওয়ার সময় বি.চৌধুরীর ছেলে মাহী বি. চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ড. কামাল হোসেনের আমন্ত্রণে তার বাড়িতে এসেছিলাম। কিন্তু বাসার দরজা খোলেননি কেউ। বি. চৌধুরীর মতো একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে ডেকে এনে তার সঙ্গে দেখা না করা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। এখন বোঝা যাচ্ছে যে ঐক্য কাদের কারণে হচ্ছে না, কেন হচ্ছে না?’
এদিকে, দুপুর থেকেই মতিঝিলে নিজের চেম্বারে ছিলেন ড. কামাল হোসেন।
বাসায় বি.চৌধুরীকে ডেকে কেন দেখা করেননি সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে গণফোরামের যুগ্ম সম্পাদক আ ও ম শফিকুল্লাহ জানান,‘ ড. কামাল হোসেনের পক্ষ থেকে বি. চৌধুরীকে জানানো হয় তিনি (ড. কামাল) এখন মতিঝিলের অফিসে রয়েছেন, তিনি যেন সেখানে আসেন। কিন্তু, তারা মতিঝিলে না এসে বেইলি রোডে তার বাসায় গিয়েছেন। সেসময় তিনি বাসায় ছিলেন না।’
এদিকে ঐক্য প্রক্রিয়ার বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুপুর থেকেই ড. কামাল হোসেন তার মতিঝিলের চেম্বারে দফায় দফায় বৈঠক করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন ঐক্য প্রত্যাশী নেতার সঙ্গে।
ঐক্য প্রক্রিয়ার একজন নেতা জানান, বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেখানে বিকাল তিনটার দিকে এসে সাড়ে তিনটায় বেরিয়ে যান। এরপর তিনি পাশেই ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের চেম্বারে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে বিকাল চারটার দিকে মির্জা ফখরুল আবার ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে প্রবেশ করেন।
এদিকে মাহী বি. চৌধুরী জানিয়েছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে আজ সন্ধ্যায় বারিধারায় বি.চৌধুরীর বাসভবনে বিকল্প ধারার পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে কথা বলবেন বিকল্পধারা সভাপতি ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান বি.চৌধুরী।
অন্যদিকে, জাতীয় প্রেস ক্লাবের তিন তলায় সন্ধ্যা ৬টায় পৃথক সংবাদ সম্মেলন করবে ঐক্য প্রক্রিয়ার বাকি নেতারা।
জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন এ তথ্য জানান।
উল্লেখ্য, সরকারবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের জন্য সমমনা দলগুলোর প্রতি ড. কামাল হোসেন সম্প্রতি আহ্বান জানালে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার এসংক্রান্ত অনুষ্ঠানে যোগ দেন যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা সভাপতি বি.চৌধুরী। ওই অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির স্থায়ী কমিটির আরও কয়েকজন নেতাও ড. কামাল হোসেনের আহ্বানে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মূলত সেদিনই বোঝা যায় বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলো এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে যাচ্ছে। তবে এরপর বি. চৌধুরীর বাসায় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের এক বৈঠকে ডেকে বি. চৌধুরীর ছেলে মাহী বি. চৌধুরী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী কোনও দলের সঙ্গে তারা নির্বাচনকালীন ঐক্য গড়বে না। এক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয় বিএনপিকে এই জোটে আসতে হলে জামায়াতসহ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী দলগুলোকে ছেড়েই আসতে হবে। একইসঙ্গে জোট গড়ার আগেই আসন ভাগাভাগি ও সরকার গঠন করলে কার কী ভূমিকা থাকবে তা স্পষ্ট করার দাবিও ছিল তাদের। তবে সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত এক নেতার ফোন লন্ডনের একটি ফোনে সংযুক্ত রয়েছে মাহী বি. চৌধুরীর দেওয়া এমন খবরে তড়িঘড়ি বৈঠক শেষ করে দেন বি. চৌধুরী। তখন থেকে ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার বিষয়টি নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়। এদিকে, ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে বিএনপিকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে জোটভুক্ত দলগুলো। তখন পরবর্তীতে বিএনপি যা করবে জোটের সবার সঙ্গে কথা বলে করবে বলে তাদের প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর দুইবার বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার বিষয়ে জোট গঠনের ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ আজ শনিবার (১৩ অক্টোবর) বিকালে ড. কামাল হোসেনের বাসায় বৃহত্তর ঐক্যের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরে তা বাতিল করেন তিনি। আর বি.চৌধুরীর সঙ্গে বাসাতেই পূর্ব নির্ধারিত সাক্ষাতের কথা থাকলেও সেসময় মতিঝিলের অফিসে থাকায় তার বাসার দোরগোড়া থেকে ফিরে যান যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান বি. চৌধুরী।