প্রযুক্তির খবর: প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে মানুষের জীবনধারা, বদলে যাচ্ছে কাজের ধরণ। পেশাগত কাজে আসছে পরিবর্তন। অনলাইনে কর্মসংস্থান ভৌগলিক বাধাকে অতিক্রম করেছে। এর বড় উদাহরণ ‘আউটসোর্সিং’। বিশ্বে এখন লাখ লাখ তরুণ অনলাইনে কাজ করছে। সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ভিত্তিক শ্রমশক্তির ১৫ ভাগ রয়েছে বাংলাদেশে। যাদের সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখের বেশি। ইন্টানেটের সুবাদে ভৌগলিক দূরত্ব মানুষের যোগাযোগে আর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না।
বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট-২০১৯: দ্য চেঞ্জিং নেচার অব ওয়ার্ক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে কাজের প্রকৃতি পরিবর্তনের বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উত্পাদন খাতে প্রযুক্তিগত ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে বাজার সম্প্রসারণ এবং সামাজিক অংশগ্রহণ বাড়ছে। এর মধ্যে কিছু পরিবর্তন ভাবনার কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত বিশ্বে দক্ষ শ্রমিকের অনেক চাহিদা বেড়েছে। উন্নয়নশীল দেশেও এর চাহিদা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইথিওপিয়া, বলিভিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় দক্ষ জনশক্তির চাহিদা প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু মধ্য ও নিম্ন দক্ষতা সম্পন্ন শ্রমিকের চাহিদা সেভাবে বাড়েনি। ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়কালে জর্ডানে আধা-দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে মাত্র সাড়ে ৭ ভাগ। অন্যদিকে বাংলাদেশে এর চাহিদা না বেড়ে উল্টো ২০ ভাগ কমেছে। এসময়কালে বাংলাদেশে নিম্ন দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে ব্যাপক হারে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রযুক্তিগত ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে উন্নতবিশ্বে কারখানায় শ্রমিক নিয়োগের হার কমেছে। নিম্ন আয়ের দেশের নিয়োগ খুব একটা বাড়ছে না। তবে কারখানায় পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নিয়োগ বাড়ছে বেশি হারে। বিশ্বকে এখন মানবসম্পদ খাতে আরো বিনিয়োগ করতে হবে। শিশুকাল থেকেই তাদের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। এতে উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে যে শিশুরা প্রাক প্রাথমিক স্কুলে গিয়েছে তারা পরবর্তীতে স্কুল শিক্ষায় ভালো ফল করেছে। শিশুদের পেছনে বিনিয়োগ করা হলে সেটি পরবর্তীতে ভালো ফল বয়ে আনে।
প্রতিবেদনটির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ১৭ শতাংশ নতুন প্রযুক্তি বেশ ভালো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। জীবনযাত্রায় মাঝারি পর্যায়ে ইতিবাচক প্রভাব আছে ৫০ ভাগ প্রযুক্তির। আর চূড়ান্ত পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে ৪ শতাংশ প্রযুক্তি ব্যবহারে। ২৩ শতাংশ নতুন প্রযুক্তি বিশ্ব অর্থনীতিতে খুবই ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। ১০ শতাংশ নতুন প্রযুক্তি খুবই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে বিশ্ব অর্থনীতিকে। একইভাবে সামাজিক খাতে ১৫ শতাংশ প্রযুক্তির খুবই ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য দেশগুলোকে বাড়তি বিনিয়োগ করতে হবে। এরজন্য আয়ও বাড়াতে হবে। নতুন আয়ের খাত খুঁজে বের করতে হবে। বিশেষ করে মূল্য সংযোজন কর, আবগারি শুল্ক (তামাক, পানীয়, চিনি, ইত্যাদি), কার্বন কর, কর্পোরেট কর, সম্পত্তি কর, জ্বালানি ভর্তুকি কমিয়ে আনাসহ ডিজিটাল অর্থনীতির উপর কর আয়ের বাড়তি উত্স হতে পারে।