দেশের খবর: বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে পুলিশ বাহিনীতে বড় ধরনের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। অক্টোবরের শুরু থেকে পদোন্নতির এ তোড়জোড় শুরু হয়েছে। শিগগিরিই এ পদোন্নতি চূড়ান্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি না পাওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। এ কারণে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের শেষ সময়ে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন বঞ্চিতরা।
সুপার নিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত পদ সৃষ্টি) ভিত্তিতে ৪৯৫ জনের পদোন্নতি চাওয়া হয় পুলিশ সদর দফতর থেকে। গত জুলাই মাসে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে পুলিশ বিভাগে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্যের একটি চিত্র তুলে ধরে চিঠি পাঠানো হয়। যার স্মারক নম্বর ওঅ্যান্ডএম/৪৪.০১.০০০০.০২৬.০২৬.০২.০৫১-২০১৮-৩৬২(২)। আইজিপির পক্ষে অতিরিক্ত ডিআইজি (ওঅ্যন্ডএম) এসএম আক্তারুজ্জামান স্বাক্ষরিত তালিকা পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
পুলিশ সদর দফতরের চিঠিতে বলা হয়, পুলিশের নেতৃত্ব পর্যায়ে কর্মস্পৃহা, মনোবল, মর্যাদা, শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা নিশ্চিত করতে উচ্চতর পদের আনুপাতিক ও তুলনামূলক অপর্যাপ্ততা একটি বড় অন্তরায়। বর্তমান সরকারের আমলে অন্যান্য সংস্থার ন্যায় বাংলাদেশ পুলিশে জনবল বৃদ্ধি পেলেও উচ্চতর পদের প্রসারণ কাঙ্ক্ষিত অনুপাতে না হওয়ায় বর্তমানে পদোন্নতির সমস্ত যোগ্যতা অর্জনের পরও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তকর্তারা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত। ১৯৮৪ এবং ৮৫ ব্যাচের ১১ জন কর্মকর্তারা (গ্রেড ২) ৩০ বছর বা এর বেশি সময় চাকরিকাল অতিক্রম করলেও গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। একইভাবে ১৯৯১, ১৯৮৯ ও ১৯৮৫ সালে সিসিএসে যোগদান করা ৪২ জন ডিআইজি, গ্রেড-২ এ পদে পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন।
চিঠিটি নিয়ে গত ২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে আইজিপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কয়েক দফা বৈঠক হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন খোদ আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৪৯৫ জনের প্রস্তাবনাটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তালিকার মধ্য থেকে ইতোমধ্যে ২৭৮ জনের পদোন্নতি চূড়ান্ত হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, ওই প্রস্তাবনায় চারজন ডিআইজিকে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি দিতে পুলিশ সদর দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ১১ জন অতিরিক্ত ডিআইজিকে ডিআইজি হিসাবে পদোন্নতি দেয়া যায় কিনা- তা নিয়েও আলোচনা চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিক কারণে অনেকেই পদোন্নতি পান না, তা সত্য। এরপরও বর্তমান সরকার নানাভাবে পুলিশের উপকারে এসেছে। অন্যান্য সরকার তা কখনও করেনি। চলতি মাসের মধ্যে পুলিশের অনেকে পদোন্নতি পাবেন। এটা নির্বাচনী পদোন্নতিও বলতে পারেন আবার রুটিন মাফিকও বলতে পারেন।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঢাকা রেঞ্জের বর্তমান ডিআইজি চৌধুরী আবদ্ল্লাহ মামুন ও নৌ-পুলিশের ডিআাইজি শেখ মারুফ হাসানসহ চার কর্মকর্তা পদোন্নতি পাচ্ছেন।
পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-১) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সুপার নিউমারারি চূড়ান্ত করতে আমরা একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। প্রায় পৌনে তিনশর কাছাকাছি কর্মকর্তা চূড়ান্ত করা হয়ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। দীর্ঘদিন ধরে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। আইজিপিসহ অন্য কর্মকর্তারা পদন্নোতির ব্যাপারে ইতিবাচক। আশা করি, যারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না অল্প সময়ের মধ্যে পেয়ে যাবেন।’
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ক্যাডার সার্ভিসের অন্যান্য ক্যাডারে যেভাবে পদোন্নতি হয় পুলিশ বিভাগে সেভাবে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। প্রশাসন ক্যাডারে সচিব থেকে সহকারী সচিব পদে ৫৬৬০ পদের মধ্যে মঞ্জুর করা পদ রয়েছে ৫২৫৭ জন। কিন্তু সুপার নিউমারারিতে পদোন্নতি পেয়েছে ৪৯৮৫। কিন্তু পুলিশের ক্যাডার পদ ৩৩৪টি। সুপার নিউমারারিতে পুলিশের পদোন্নতি পদ শূন্য। প্রশাসন ক্যাডারে গ্রেড-১ এ সচিব পদের সংখ্যা ১.২৭ শতাংশ যেখানে পুলিশে আছে মাত্র দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। প্রশাসন ক্যাডারের তুলনায় পুলিশে গ্রেড-১ এ ৩৮টি পদ পাওয়ার কথা থাকলেও আছে মাত্র দুটি। একইভাবে গ্রেড-২ এ ২২৭টি পদের তুলনায় আছে মাত্র ১৩টি পদ। গ্রেড ৩ (ডিআইডি/ যুগ্ম সচিব) পদে ৩৬৫টি পদ থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৬২টি। গ্রেড-৫ এ ৮০৪ পদের বিপরীতে আছে ৩৬২টি।