অনলাইন ডেস্ক: অভাব-অনটনের কারণে শৈশবে স্কুলে যেতে পারেননি হরষিত বাড়ৈ। ছোটবেলায় হরষিত বাড়ৈর বাবা মারা যান। খেত-খামারে কাজ করে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে। তাই শৈশবে স্কুলে যাওয়া হয়নি তার।
তবে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। অভাব-অনটনের কারণে প্রবল ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে হয়েছিল হরষিত বাড়ৈকে। জীবনের মাঝামাঝি বয়সে এসে পড়ালেখা শুরু করেন হরষিত বাড়ৈ। ৪১ বছর বয়সে এবার অষ্টম শ্রেণির সমাপনী (জেএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রাজিহার ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের শিক্ষার্থী হরষিত বাড়ৈ (৪১) বৃহস্পতিবারের শ্রীমতী মাতৃ মঙ্গল বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী উপজেলা কোটালীপাড়া রামশীল গ্রামের মৃত হরে কৃষ্ণ বাড়ৈর ছেলে হরষিত বাড়ৈ। তার মায়ের নাম পবিত্র বাড়ৈ।
হরষিত বাড়ৈ বলেন, ছোটবেলায় বাবা মারা যান। এরপর অন্ধকার নেমে আসে আমার ও মায়ের জীবনে। যে বয়সে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল, সে বয়সে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে আমাকে। লেখাপড়া আর করা হয়নি। খেত-খামারে কাজ করে সংসার চালাতে হয়েছে। তবে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ ছিল সবসময়। লেখাপড়া ছাড়া কোনোভাবেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। চতুর্থ শ্রেণির একটি চাকরির আবেদন করতে অন্তত অষ্টম শ্রেণির একটি সনদপত্র দরকার হয়। যখন বুঝতে পেরেছি তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বুঝতে পারার পর নতুন উদ্যমে পড়ালেখা শুরু করি। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে আগৈলঝাড়ার রাজিহার ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারে কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ে ভর্তি হই। এবার নিয়মিত ছাত্র হিসেবে অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছি।
পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল চন্দ্র দাসের নজর পড়ে পরীক্ষার্থী হরষিত বাড়ৈর ওপর। ইউএনও বিপুল চন্দ্র দাস হরষিত বাড়ৈর প্রবেশপত্রটি দেখে অবাক হন।
ইউএনও বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই। যেকোনো বয়সে লেখাপড়া করা যায়। তার অনন্য উদাহরণ হরষিত। জ্ঞান অর্জনের জন্য বয়সের চেয়ে নিজের ইচ্ছা শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে হরষিত লেখাপড়া করায় বর্তমান সমাজে দেশের জন্য একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তার থেকে অনেকেরই শিক্ষা নেয়া উচিত।