অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকায় মাদ্রাসাগুলোর ‘শোকরানা মাহফিলের’ জন্য জুনিয়র স্কুল স্তরের এমন দুটি পরীক্ষা আকস্মিকভাবে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে অংশ নেবার কথা সাতাশ লাখ পরীক্ষার্থীর ।
গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশ জুড়ে শুরু হওয়া এবারের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে প্রায় সাতাশ লাখ শিক্ষার্থী। এ পরীক্ষার মধ্যেই হঠাৎ করেই রোববারের পরীক্ষা স্থগিত করে সেটি শুক্রবারে নেয়ার ঘোষণা দিলেও শিক্ষাবোর্ডগুলো সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করেনি।
তবে পরে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, রোববার ঢাকায় মাদ্রাসা-কেন্দ্রিক একটি সমাবেশ আছে এবং সে কারণে শিশুরা যাতে নিরাপদে ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারে সেজন্য পরীক্ষাটি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
একজন অভিভাবক ফারুক আহমেদ বলছেন, হঠাৎ করে পরীক্ষা পেছানোর কথা শুনে তার সন্তান রীতিমত হতাশ। নাসরিন আলম নামে আরেকজন অভিভাবক বলছেন, এভাবে পরীক্ষা পেছানোর কারণে এখন পরপর তিনদিন পরীক্ষার্থীদের তিনটি কঠিন বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
এর আগে শুক্রবারই পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো রোববার যেন ঢাকায় পরীক্ষার্থীরা একটু সময় নিয়ে বের হয়। আর এর কারণ ছিলো ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদ্রাসার ছটি বোর্ডের একটি শোকরানা মাহফিল।
কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে আইন পাশ করায় মূলত প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে কওমি মাদ্রাসা গুলোর কয়েক লাখ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যোগ দেবেন। এর মধ্যেই আজকের পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণা দেয়া হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলছেন পরীক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই তারা পরীক্ষা শুক্রবারে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
“কাল (আজ) সকাল থেকে বড় ধরণের সমাবেশ হবে ঢাকায়। সে কারণে আমরা মনে করেছি ছেলেমেয়েরা যেনো সমস্যায় না পড়ে। কারণ আমাদের হাতে সময় আছে। নিরাপদে যাতে যেতে পারে ও পরীক্ষা দিতে যেনো সমস্যা না হয় সে কারণে পরীক্ষা শুক্রবারে নেয়া হয়েছে”।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সমাবেশ পেছানোর কোনো সুযোগ ছিলোনা বরং পরীক্ষা পেছানোর সুযোগ ছিলো।
এটা একটা ভিন্ন রকম। তাদের ডিগ্রি স্বীকৃতি পেয়েছে সরকার কর্তৃক। সে কারণে তারা সমাবেশ করবে শোকরানার নামে। আমরা তো এটা বন্ধ করতে পারিনা। তারা আগে আসেওনি”।
ঢাকায় কওমি মাদ্রাসাগুলোর এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আর সভাপতিত্ব করবেন হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফি।
তবে হেফাজতে ইসলামের একজন নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহ বলছেন, পরীক্ষা পেছানোর সাথে তাদের কর্মসূচির কোনো সম্পর্ক নেই এবং এ বিষয়ে তারা অবগতও নন।
তবে কর্তৃপক্ষ কিংবা মাদ্রাসা নেতারা যাই বলুন একটি সমাবেশ বা সম্বর্ধনার জন্য শিশুদের দেশজুড়ে শিশুদের পরীক্ষা এভাবে পিছিয়ে দেয়াকে অগ্রহণযোগ্য বলছেন শিক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান।
“এ ধরণের একটা কর্মসূচির জন্য সাতাশ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা পেছাবে, তারা মানসিকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে এটা কোনোভাবেই গ্রহণ করা যায়না। ভবিষ্যতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত”।
তবে সমালোচনা কিংবা অসন্তোষের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলছেন তারা শিশুদের ভালোর জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাতে তারা নির্বিঘ্নে নিরাপদে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। সূত্র: বিবিসি বাংলা