বিদেশের খবর: দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল পুরো ৮ ঘণ্টার জন্য থেমে যাবে। পুরো সিউল জুড়ে আজ বৃহস্পতিবার সুনসান নিরবতা বিরাজ করবে। কোনো দোকান খোলা হবে না, বন্ধ হয়ে যাবে ব্যাংক, শেয়ারবাজার খুলবে দেরিতে। নির্মাণ কাজ থেমে যাবে, সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণও আজকের জন্য মাফ। আর এ সবই হবে একটি মাত্র পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে। খবর বিবিসির
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার স্থানায় সময় সকাল ৮:৪০ টায় সুনেয়াং পরীক্ষা শুরু হবে। টানা আট ঘণ্টা ধরে চলবে এ পরীক্ষা। ৫ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী এ পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন। আর এ পরীক্ষার সফলতার ওপরই নির্ভর করবে তাদের ভবিষ্যতের জীবন।
সুনেয়াং কোরীয় ভাষা। এর পুরো নাম হলো কলেজ স্কলাস্টিক অ্যাবিলিটি টেস্ট (সিস্যাট)। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ওপর নির্ভর করবে কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে কি না। বিশ্ববিদ্যালয় শেষে চাকরি, মানসম্মত বেতন, তারা কোথায় থাকবে এবং তাদের ভবিষ্যত জীবন কেমন হবে- তা এ পরীক্ষার ওপর নির্ভর করছে। এসব বিবেচনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে পরীক্ষাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১৮ বছরের কো ইউন-সুহ এই প্রথম এই পরীক্ষার সম্মুখিন হবেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভবিষ্যত জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই সুনেয়াং পরীক্ষা। কোরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই একটিমাত্র দিনের জন্য আমি ১২ বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি এমন ব্যক্তি সম্পর্কেও জানি, যে এর আগে পাঁচবার এ পরীক্ষার সম্মুখিন হয়েছেন। তারপরও পাস করতে পারেননি। ’
প্রতি বছর নভেম্বর আসলেই এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পুরো দেশ কার্যত অচল হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে সাইরেনের শব্দে এই নিরবতা ভাঙে, যেটা পুলিশের মোটরসাইকেল সাইরেনের শব্দ। এসব পুলিশ কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে সহায়তা করেন।
এই দিনটি আসলেই অভিভাবকদের মাঝে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। তাদের সন্তানরা যাতে পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতে পারে, সেজন্য প্যাগোডা ও গির্জায় সন্তানদের ছবি সঙ্গে নিয়ে প্রার্থনা করতে দেখা যায় এসব অভিভাবকদের।
লি জিন-ইউং। ২০ ব্ছরের এ তরুণ এর আগে দুইবার সুনেয়াং পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে আমি এক সপ্তাহ আগে থেকেই সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে ওঠা শুরু করেছি। যাতে করে এ সময় পড়লে আমার ব্রেন ভালো কাজ করে। আমি প্রায়ই নিজেকে বলি-তুমি অনেক বেশি পড়াশেনা করেছ। এখন সময় এসেছে তার ফল দেখানোর।’
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার স্পষ্ট মনে আছে, গত বছর যখন পরীক্ষা উপলক্ষে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে স্কুল গেটে পৌছালাম, তখন দেখেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে পড়ুয়া একদল ছাত্র গান গাইছেন আর স্লোগান দিচ্ছেন। তারা আশির্বাদস্বরূপ আমাদের হাতে ইয়ট (এক ধরনের মিষ্টান্ন) তুলে দিয়েছিলেন।’
অতি গোপনীয়তায় প্রশ্নপত্র তৈরি: পুরো পরীক্ষাটি যেন একটি রহস্যে আবৃত। পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে প্রতি সেপ্টেম্বরে (পরীক্ষার দুই মাস আগে) সিউল থেকে ৫০০ শিক্ষক বাছাই করা হয় এবং তাদেরকে পর্বতবেষ্টিত গাংওন প্রদেশের এক গোপন জায়গায় রাখা হয়। পরীক্ষার এক মাস আগেই তাদের কাছ থেকে ফোনগুলো নিয়ে নেয়া হয় এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাদের সব ধরনের যোগাযোগ নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময় তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন না। এমনকি তারা বাইরেও বের হতে পারেন না।
পরীক্ষার প্রশ্ন ও মানবন্টন: জাতীয় ভাষা-অতীত (৪৫টি প্রশ্ন, ১০০ পয়েন্টস, ৮০ মিনিট), গণিত (৩০টি প্রশ্ন, ১০০ পয়েন্ট, ১০০ মিনিট), ইংরেজি-অতীত ইংরেজি (৪৫টি প্রশ্ন, ১০০ পয়েন্ট, ৭০ মিনিট), কোরিয়ান ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান/বিজ্ঞান/কারিগরি শিক্ষা, ২০টি প্রশ্ন, ৫০ পয়েন্ট, ১০২ মিনিট। এর মধ্যে কোরিয়ান ইতিহাস আবশ্যিক। বিদেশি ভাষা অথবা চীনা বিষয়াবলি ও ক্লাসিক, ৩০টি প্রশ্ন, ৫০ পয়েন্ট, ৪০ মিনিট।