দেশের খবর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার বন্ধে আরও কিছু কর্মসূচি নিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর পেছনে শরিক দল বিএনপি রয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরবে ঐক্যফ্রন্ট। এক্ষেত্রে সেমিনার ও লিফলেট বিতরণ এবং নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘দেশের সবাই ইভিএমের বিরুদ্ধে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্থান ব্যক্ত করেছে। ইতোমধ্যে জনগণের মধ্যে তা গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এটিকে নিয়ে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেবে ঐক্যফ্রন্ট। সভা-সেমিনার এবং নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়া হতে পারে।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দায়িত্বশীল দু’টি সূত্র বলছে, ইভিএম ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ফ্রন্টের। বিশেষ করে সভা-সেমিনার, নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়ার পরও কোনও সমাধান না হলে আইনি পথ খুঁজে দেখবে ঐক্যফ্রন্ট।
বিএনপি ও ফ্রন্টের নেতারা জানিয়েছেন, ইভিএমে ফাঁকি আছে। ইভিএম চাই না। এছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টও নির্বাচনে ইভিএম চায় না। বি. চৌধুরী তার প্রত্যেকটি বক্তব্যে ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছেন।
গত ১৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে যায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। ইসিতে তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ প্রত্যেক কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেও ইসিকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে জোরালোভাবে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ চেয়েছে ফ্রন্টের নেতারা। লিখিত চিঠিতে ইভিএম ব্যবহারে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানোর বিষয়টিও প্রত্যাখ্যান করেছে সরকারবিরোধী এই জোট।
ড. কামাল হোসেনের সই করা চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচনে কোনও কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। ভোটগ্রহণে যেসব দেশে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে তার প্রায় সবগুলোতেই ভোট জালিয়াতি ও কারচুপির প্রমাণ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সংলাপে-অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ না করার দাবি করেছেন। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি তুলে ধরে কমিশনে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত সীমিত সংখ্যক ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। হ্যাক এবং ম্যানিপুলেট করা যায়, এই যুক্তিতে সারা পৃথিবীর সবচাইতে উন্নত প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন দেশগুলোতেও ইভিএম বাতিল করা হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোর দাবি জানায়, বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে একাদশ সংসদ নির্বাচনে একটি কেন্দ্রেও ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহারে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার ঘোষণা করেছে। আমরা ইভিএম এর বিরুদ্ধে, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নই। তাই এটিএম ব্যবহারে সেনাবাহিনী ব্যবহার করে তাদের বিতর্কিত করার এবং জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চক্রান্ত জাতি মেনে নেবে না।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা আবদুল মালেক রতন বলেন, ‘নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। আমাদের দেশের জনগণ এখনই এভাবে ভোট দিতে প্রস্তুত নয়। এটা সম্পর্কে সবাই বুঝবে, জানবে, এরপর ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ইভিএম কেনাতেও দুর্নীতি আছে। দেশের জনগণের সামনে আমরা তা সবিস্তারে তুলে ধরবো।’
ইভিএম বন্ধের বিষয়টি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে ইভিএম প্রসঙ্গটি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে।
সাংবাদিক আমীন আল রশীদ তার ইভিএম-এর আদ্যোপান্ত শীর্ষক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের সম্ভাব্যতা এবং এর কারিগরি বিষয় নিয়ে প্রথমে ধারণা পাই নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন থেকে। ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর ইভিএম নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণাপত্র পেশ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগ। যারা এর দুই বছর আগে, অর্থাৎ ২০০৭ সালে মেশিনটি বাংলাদেশে উদ্ভাবন করে।’
দেশ-বিদেশে ইভিএম ব্যবহার
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, এস্তোনিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, আয়ারল্যান্ড, ইটালি, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পেরু, রোমানিয়া, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ভেনেজুয়েলা ও ফিলিপাইনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হয়।
সনাতানী পদ্ধতির পরিবর্তে ই-ভোটিং প্রচলনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার বেশ এগিয়ে রয়েছে।