দেশের খবর: বংশগত কিডনি রোগ বা অটোসমাল পলিসিসটিক কিডনি রোগের তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। তবে ক্লিনিক্যাল স্টাডিতে দেখা গেছে, চ্যানেলটির সঠিক প্রয়োগ সম্ভব হলে এ ধরনের কিডনি রোগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এটা সফল হলে চিকিৎসায় নবদিগন্তের সূচনা ঘটতে পারে।
বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের তালিকায় সেরা তরুণ বিজ্ঞানী হিসেবে নাম ওঠা বাংলাদেশি জি এম মাহমুদ আরিফ পাভেল মঙ্গলবার ফ্লোরিডা থেকে এভাবেই তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান।
পাভেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করে স্কলারশিপ নিয়ে নিউ ইয়র্কের সেন্ট জনস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং পিএইচডি করেছেন। তরুণ এই বিজ্ঞানী বর্তমানে পোস্ট ডক্টরাল অ্যাসোসিয়েট হিসেবে ‘স্ক্রিপস রিসার্চ’-এ কাজ করছেন। বসবাস করছেন ফ্লোরিডার জুপিটারে। তিনি গবেষণা করছেন মানব শরীরের আয়ন চ্যানেল নিয়ে। আর এই গবেষণাকে স্বীকৃতি দিয়ে বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস ২০১৯ সালে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ৩০ বছরের নিচে সেরা ৩০ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান দিয়েছে।
গত শুক্রবার ফোর্বস প্রকাশিত তালিকায় ‘থার্টি আন্ডার থার্টি’ ক্যাটাগরিতে দেখা যায়, ২৯ বছর বয়সী এই বায়োলজিস্টের নাম রয়েছে তালিকার প্রথমেই। মানবকল্যাণে গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের নিয়ে আট বছর ধরে এই তালিকা প্রকাশ করে আসছে ফোর্বস।
শরীরের আয়ন ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মস্তিষ্কের নিউরনে কিছু মেমব্রেন বাউন্ড প্রোটিন থাকে, যাদের আয়ন চ্যানেল বলে। এই আয়ন চ্যানেলগুলো অনেকটা নলের মতো মেমব্রেনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। আয়নরা এই আয়ন চ্যানেলের মধ্য দিয়ে মেমব্রেনের ভেতরে এবং বাইরে যাওয়া-আসা করতে পারে। মানুষ চোখে যা দেখে, যা অনুভব করে—তা প্রোটিনের মাধ্যমে ইলেকট্রন তৈরি হয়ে একপর্যায়ে ব্রেনে যায়। আর এই আয়ন চ্যানেলে সমস্যা তৈরি হলে কিডনিতেও সমস্যা হয়। মাহমুদ আরিফ পাভেলের গবেষণার বিষয় ছিল মানব শরীরের এই আয়ন চ্যানেল বিষয়ে। একে ‘ফান্ডামেন্টাল সেন্সরস অব লাইফ’ বলে অভিহিত করেন তিনি।
পাভেল বলেন, অ্যানেসথিওলজিস্ট বা অবেদনবিদরা সার্জারির প্রয়োজনে অ্যানেসথেশিয়া দিতে বা রোগীকে অজ্ঞান করতে বেশ কিছু ওষুধ প্রয়োগ করে থাকেন। তখন এই আয়ন চ্যানেলগুলো বিভিন্ন ড্রাগ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে রোগীর কোনো অনুভূতি থাকে না। তিনি বলেন, ‘কিছু ওষুধ শিশু ও বৃদ্ধের ক্ষেত্রে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। আমরা গবেষণা করে জানার চেষ্টা করছি, এই আয়ন চ্যানেল কিভাবে কাজ করে।’ তিনি অ্যানেসথেশিয়া নিয়ে গবেষণা করছেন মলিকুলার বিজ্ঞানী ড. স্কট বি হ্যানসনের অধীনে।
এই সাফল্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পাভেল আরো বলেন, ‘আমাদের কাজটি ছিল একটি টিমওয়ার্ক। আমি ছিলাম সেই টিমের প্রধান। শোকর আলহামদুলিল্লাহ! অনেক ভালো লেগেছে এটা দেখে যে, এই সংবাদে আমার মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা বেশ খুশি হয়েছেন।’
জি এম মাহমুদ আরিফ পাভেল বলেন, রিসার্চ করতেই তাঁর ভালো লাগে। ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে গবেষণায় ভালো কিছু করার।