হাজারো বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় মার্কিন কংগ্রেসের ভবনের ক্যাপিটল হিলে অনুষ্ঠিত হয় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন মাইক পেনস। এরপরই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এতে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, সাবেক ফার্স্ট লেডি ও ট্রাম্পের সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে ডেমোক্র্যাট দলের বেশ কিছু আইনপ্রণেতা এ অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন। এমনকি অনেকে বিক্ষোভ করছেন।
এর আগে দুপুরে সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ট্রাম্প। এরপর তিনি শপথবাক্য পাঠ করেন। শপথগ্রহণের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প উদ্বোধনী ভাষণ দেন এবং তারপরেই হোয়াইট হাউসে প্যারেডের নেতৃত্ব দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের রীতি অনুযায়ী দিনের শুরুতে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পের প্রেসিডেন্টদের সরকারি অতিথি ভবন ব্লেয়ার হাউসে যান। সেখানে কিছু সময় কাটানোর পর একটি কালো রঙের গাড়িতে করে সস্ত্রীক হোয়াইট হাউসের কাছে গির্জায় প্রার্থনায় অংশ নেন ট্রাম্প। এ সময় তাঁর মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প ও তাঁর স্বামী তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।
নির্বাচনের পর থেকে আলোচিত বিষয় ছিল রাশিয়ার হ্যাকিং। কিন্তু ট্রাম্প বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছিলেন। গত ৯ জানুয়ারি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের এক উপদেষ্টা সম্পূর্ণ উল্টো কথা জানান। হোয়াইট হাউসের সম্ভাব্য চিফ অব স্টাফ রেইনস প্রিবাস বলেন, ‘হ্যাকিংয়ে রাশিয়ার হাত অস্বীকার করেন না ট্রাম্প।’
নির্বাচনী প্রচারণার সময় একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য, নারী কেলেঙ্কারি, মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিসহ বিভিন্ন কারণে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী বিতর্কের সবকটিতে হেরে যাওয়ার পরও গত বছরের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিশ্বকে চমকে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পান রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নির্বাচনে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজে ভোটের মধ্যে ২৯০টি ভোট জিতে নেন ট্রাম্প। আর ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন পান ২২৮ ভোট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে গেলে ২৭০টি ভোট পেলেই চলে।
নির্বাচনের শুরু থেকেই জনমত জরিপগুলোতে এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। এমনকি পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি কিংবা রাষ্ট্রপরিচালনার জ্ঞানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও ভোটের দৌড়ে হেরে যান হিলারি।
মার্কিন নির্বাচনে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো বরাবরই নির্বাচনে জিততে মূল ভূমিকা রাখে, সেগুলোতে জয় পান ট্রাম্প। ওহাইও, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, আইওয়া, পেনসিলভানিয়ায় জয় পেয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়াতে জয় পান হিলারি। কিন্তু সে জয় ব্যবধান গড়তে পারেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ৮৩ বছর পর এমন একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় এলেন, পূর্বে যার কোনো রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা নেই। এর আগে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টদের রাজনৈতিক পূর্ব-অভিজ্ঞতা ছিল।
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সে সময় তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, তিনি হবেন ‘সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট’। আমেরিকাকে তিনি ‘শীর্ষে’ রাখবেন সব সময়।
যদিও ক্ষমতায় বসার আগেই ট্রাম্পের প্রতি মার্কিনদের আস্থা কমতে শুরু করেছে বলে সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক জরিপে বলা হয়েছে।
সিএনএনের ওই জরিপে বলা হয়েছে, মাত্র ৪০ শতাংশ জনগণের অনুমোদন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদে বসতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটা দেশটির এর আগের প্রেসিডেন্টদের চেয়ে অনেক কম এবং সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চেয়ে ৪৪ পয়েন্ট নিচে রয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক তিন বিদায়ী প্রেসিডেন্টের চেয়ে জনগণের অনুমোদনের দিক দিয়ে ২০ পয়েন্ট নিচে রয়েছেন ট্রাম্প। ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ৬১ শতাংশ অনুমোদন নিয়ে ক্ষমতায় আসেন জর্জ ডব্লিউ বুশ, ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে ৬৭ শতাংশ অনুমোদন নিয়ে বিল ক্লিনটন এবং সর্বশেষ ২০০৯ সালে ৮৪ শতাংশ জনগণের অনুমোদন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন বারাক ওবামা।
যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ জনগণই প্রেসিডেন্ট পদে থাকার বিষয়ে ট্রাম্পের যোগ্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বলেও জরিপে উঠে এসেছে। দেশটির ৫৩ শতাংশ জনগণ বলছেন, নির্বাচনের দিন থেকেই প্রেসিডেন্সি চালানো নিয়ে ট্রাম্পের প্রতি তাঁদের আস্থা কমতে শুরু করেছে। ট্রাম্প নিজের প্রতি মার্কিনদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবে কি না, তা সময় বলে দেবে।