দেশের খবর: আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে বুধবার সকাল ৯টার দিকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মোফাজ্জল হোসেন তুষার, মেডিসিন বিভাগের রাশেদুজ্জামান ও সুজাউদ্দিন তালুকদার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সামনে আমরণ অনশনে থাকা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর শারিরীর অবস্থা পরীক্ষা করতে আসেন।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মোফাজ্জল হোসেন তুষার বলেন, ‘তিনদিন ধরে কিছু না খাওয়ার কারণে তার শরীর ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। তার রক্তচাপ কমে যাচ্ছে। আগে থেইে তার হৃদপিন্ডে রিং পরানো রয়েছে। চিকিৎসা না পেলে বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারে। আমরা তাকে তার শরীরের অবস্থার বিষয়টি বুঝিয়েছি। উনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে রাজি হয়েছেন। জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামের কাছে থেকে অনুমতি নিয়ে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
তবে হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিকিৎসকদের উদ্দেশে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি হাসপাতালে দুই ঘণ্টার বেশি থাকবো না। চিকিৎসা শেষে আমাকে তোমরা এখানে নিয়ে আসবে।’
গত রোববার টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের বল্লবভবাড়ি ও সরাতৈল এলাকায় গণসংযোগে করতে গেলে তার গাড়ি বহরে হামলা হয়। এসময় চারটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়, এতে ১০ নেতাকর্মী আহত হন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারীর কর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন লতিফ সিদ্দিকী।
হামলার বিচার চেয়ে রোববার বিকেল থেকে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন লতিফ সিদ্দিকী। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, হামলারকারীদের গ্রেফতার ও কালিহাতী থানার ওসি মোশারফ হোসেনকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তিনি সেখানেই বসে থাকবেন বলে জানান। রোববার রাতে জেলা রিটার্নিং কর্মকতার কার্যালয়ের সামনে শীতের কারণে খাট পেতে নেন লতিফ সিদ্দিকী।
এর মধ্যে সোমবার টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি আমরণ অনশনে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
দাবি মানা না হলে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে থেকে উঠবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী। এতে তার কোনো ক্ষতি হলে নির্বাচন কমিশন দায়ী থাকবে বলেও চিঠিতে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতা।
চিঠিতে লতিফ সিদ্দিকী লিখেছেন, আমার ধর্মঘটের ১৮ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। কিন্তু কোনো প্রতিকার না পেয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম একই সঙ্গে আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার। আমার যদি কোনো ক্ষতি হয়, সে জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী থাকবে বলে ঘোষণা দিচ্ছি।
এদিকে আমরণ অনশনের কারণে তার শারীরিক অবস্থার মারাক্তক অবনতি হচ্ছে বলে মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শরীফ হোসেন খান জানিয়েছিলেন। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নারায়ন চন্দ্র সাহা জানান, হাসপাতালের চার সদস্যের একটি দল মঙ্গলবার বিকেলের দিকে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে দেখেছেন। অনশনের কারণে তিনি ওষুধ খাচ্ছেন না। এতে তার শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। ব্লাড পেশার ব্যাপক উঠানামা করছে। কমে গেছে সুগার। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। তার পরামর্শক্রমে বুধবার সকালে তিন সদস্যর একটি মেডিকেল টিম সকালে আব্দুর লতিফ সিদ্দিকীকে দেখতে আসেন। তার শরীরের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামের পরামর্শে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, এরপর ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং ২০১৪ সালে ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক এই মন্ত্রী নিউইয়র্কে হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের কারণে মন্ত্রিত্ব হারান, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন এবং সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন।