দেশের খবর: গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সারা দেশের নির্বাচনী পরিবেশের কথা উল্লেখ করে সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি মানুষের আস্থা নেই। আর আস্থা অর্জন হয়, এমন কোনো কাজ এ পর্যন্ত তারা করেনি। এ অবস্থায় সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে জনমনে শঙ্কা রয়েছে।
আজ রবিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মতামত তুলে ধরা হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার লক্ষ্যে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন সুজনের সহকারী সমন্বয়ক নেসার আমিন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সুজন সভাপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমার নিজেরও আস্থা নেই। কারণ সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের আস্থা অর্জিত হয়, এ পর্যন্ত তাদের এমন কোনো কাজ চোখে পড়েনি। তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য সবার আগে দরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হবে, এমনটা নিশ্চিত হলে রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক কিছুই ঠিক হয়ে যাবে।
নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড আছে কি-না জানতে চাইলে হাফিজ উদ্দিন বলেন, পরিস্থিতি সবার জানা। সর্বস্তরে একটি আতঙ্ক বিরাজ করছে। মানুষ ভোট দিতে যাবে কি-না, সেখানে সন্দেহ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। তবে সাধারণ মানুষের ধারণা সেনাবাহিনী নামলে পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কেটে যাবে। নির্বাচন কমিশন, সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে অনেক ভালো ভালো কথা রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের পর তারা ইশতেহার ভুলে যায়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে, তারা গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। এ ছাড়াও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এগুলো তারা আগে করেননি কেন। একটি দল ১০ বছর ক্ষমতায় থেকে কী করেছে? আগামীতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহারে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু সবার আগে জনগণের ভোটাধিকার গুরুত্বপুর্ণ। মানুষ ভোট দিয়ে তার সরকার নির্বাচিত করবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদরা একে অন্যকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। তাদের মধ্যে সহনশীলতা নেই। এটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল আচরণ করার আহ্বান জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা আছে। সবচেয়ে বড় শঙ্কা হলো তারা ভোট দিতে যেতে পারবে কি-না। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনটি বিতর্কিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। বাকি আসনগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল একেবারে কম। এ অবস্থায় আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হলে সবাইকে এর দায় নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, সরকার, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমসহ সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণমাধ্যম হলো নির্বাচন কমিশনের সহায়ক শক্তি। এই শক্তিকে বাইরে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের এই সিদ্ধান্ত কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ফলে নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিদেশি পর্যবেক্ষক জরম্নরি। কারণ পর্যবেক্ষক সব সময় পাহারাদারের ভূমিকা পালন করে। এতে নির্বাচনে অনিয়ম কম হয়। তবে পর্যবেক্ষক ছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে যার যার জায়গা থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে।
মূল বক্তব্যে নেসার আমিন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক ভালো প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এর মধ্যে সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের কথা বলেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বলতে কী বুঝাবে তা পরিষ্কার করা হয়নি। অন্যদিকে একটি দল ইশতেহারে অন্য দলের সমালোচনা করেছে। কিন্তু অন্যদলের ইতিবাচক কোনো দিক উল্লেখ করেনি। অর্থাৎ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গতানুগতিকভাবে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে দুই রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বর্জনের কথা বলেছে। এটি ইতিবাচক। এ ছাড়াও রাজনৈতিক ঐক্যমতের কথা রয়েছে। কেউ কেউ শোষণ-বৈষম্যহীন সমাজ ও ইনসাফের কথা বলেছে। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তবে ইশতেহার যেন বাস্তবায়ন হয়, এ জন্য সব নাগরিককে ভূমিকা রাখতে হবে।