খেলার খবর: বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আম্পায়ারিং। দুই দলের জন্যই ম্যাচটি ছিল শিরোপা লড়াইয়ে অঘোষিত ফাইনাল। গতকালের ম্যাচটি ৫০ রানে হেরে সিরিজ খুঁইয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইনিংসের ৪র্থ ওভারে ওশানে থমাসের করা শেষ বলটিতে মিড অফে ক্যাচ দেন লিটন দাস। কিন্তু তার আগেই সেটাকে নো ডাকেন আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। তবে রিপ্লেতে দেখা যায় বোলারের পা ভিতরেই ছিল। এই নো বল নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক। ম্যাচ বন্ধ থাকে প্রায় ১০ মিনিট।
ক্রিকেটাররা সামান্য প্রতিবাদ করলেও যেমন কঠিন শাস্তির শিকার হন, আম্পায়ারদের জন্য তাৎক্ষণিক এরকম কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে তাদের পারফরম্যান্সও যে বিচার করা হয় সেটা জানান বিসিবির আম্পায়ার্স চিফ কোচ এনামুল হক মনি, ‘প্রতি ম্যাচে আম্পায়ারদের জন্য একজন লোকাল ও একজন আন্তর্জাতিক কোচ থাকেন। এই ম্যাচে লোকাল কোচ হিসেবে আমি ছিলাম। আমরা আমাদের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখি ও তাদের সেটা বলি।
আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে কোনো দলের অসন্তুষ্টি থাকলে ম্যাচ শেষে অধিনায়ক যে প্রতিবেদন জমা দেন তাতে সেটা উঠে আসে, ‘অধিনায়কের রিপোর্ট সবসময় কনফিডেনশিয়াল। সে আনহ্যাপি হলো অবশ্যই লিখবে। ম্যাচ রেফারিও একটা রিপোর্ট লিখবে। সেটা ওই আম্পায়ারের কাছে যাবে এবং অবশ্যই আইসিসির কাছে যাবে। এরপর সেই অনুযায়ী আম্পায়ার তার উন্নতির জন্য কাজ করবে।’
এনামুল হক মনির মতে, আম্পায়ারের উন্নতির জন্য তাদের দেখভালের দায়িত্বটা পালন করতে হয় লোকাল কোচদেরই। নিজে খেলা থেকে অবসরের পর বাংলাদেশের ১ম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে এক দশক আন্তর্জাতিক আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই ক্রিকেটার বলেন, ‘দেখুন আমার পর যারা এসেছে সবাই ভালো করছে। এ দুজন মাত্রই আইসিসি প্যানেলে ঢুকেছে। তানভীরের এই সিরিজেই অভিষেক হলো। হয়তো বাংলাদেশে তারা অভিজ্ঞ, কিন্তু আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা নেই। ম্যাচে ডে-নাইট টেলিভাইজড ইস্যু ছিল। তাছাড়া এটি হাইভোল্টেজ সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ। প্রেশার ছিল অনেক।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন আম্পায়ারের কাজ শুধু বল কাউন্ট করা বা আউট হলো কি হলো না সেটা দেখা নয়, বরং এরকম পরিস্থিতি হলো সে কিভাবে সামাল দিচ্ছে, রুলস কীভাবে প্রয়োগ করছে – সেটাই তার বিচক্ষণতার পরিচয়। এটা দ্বারাই তার যোগ্যতা নিরূপন করা হয়।’
পূর্ণ সদস্য দেশগুলো থেকে একাধিক আম্পায়ার নিয়ে প্রতিবছর প্যানেল তালিকা প্রস্তুত করে আইসিসি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের আম্পায়ার ঠিক হয় বিসিবির সুপারিশেই। কিন্তু বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক তৈরী হয় প্রায়ই। এখন তাই প্রশ্ন উঠছে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো কি কোনোভাবে আম্পায়ারিংয়ের মান কমিয়ে দিচ্ছে?
এনামুল হক মনির বলেন, ‘অবশ্যই। দেখুন আমি টপ লেভেলে ক্রিকেট খেলে টপ লেভেলে আম্পায়ারিং করেছি। আর এখানেও ঘরোয়া ক্রিকেটটাই হলো অনুশীলনের জায়গা। তো আপনি যদি ভালো প্রাকটিস করতে না পারেন, পরিচ্ছন্নভাবে ম্যাচ পরিচালনা করতে না পারেন, তাহলে তো ডেভেলপ হবে না। আমাদের ডমেস্টিকে যেসব বাধা আছে সেগুলো ওভারকাম না হলো তার প্রভাব পড়বেই।’
এছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেট সম্প্রচার না হওয়াও একটা কারণ হিসেবে দেখছেন এনামুল হক। তবে সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেই আম্পায়ারদের সেরাটা বের করে আনার তাগিদ তার।