ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, কালিগঞ্জ: কালিগঞ্জের তারালী ইউনিয়নের বাথুয়াডাঙ্গায় সহিংসতা মামলার জেল খাটা আসামি ঠক, প্রতারক কথিত গুনিন আরিজুলের খপ্পড়ে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে শত শত মানুষ। প্রতারণা করে এই ভ- গুনিন ব্যবসা বহু বছর ধরে নির্বিঘেœ চালিয়ে আসলেও বিষয়টি দেখার যেন কেউ নাই। বিভিন্ন দপ্তরে মাসোহারা দিয়ে দিব্যি ১৫/১৬ বৎসর ধরে ঝাড়-ফুক, তদ্বির, তেলপড়া, গাছড়া ঔষধ বানানোর নামে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সহজ সরল নিরীহ ব্যক্তিদের ঠকিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা।
সোমাবার সকাল আনুমানিক ৮টার সময় সরেজমিনে কালিগঞ্জ উপজেলার তারালি ইউনিয়নে বাতুয়াডাঙ্গা গ্রামের শাহমত আলীর পুত্র কথিত গুনিন, কবিরাজ আরিজুলের আস্তানায় গেলে এমন চিত্র ভেসে ওঠে। আর তার এই অপকর্মের সহায়তা করে আসছে একই গ্রামের জুয়াড়ি নজির হোসেন এবং নারায়নপুর গ্রামের আফজাল হোসেন ওরফে মিঠু। এদের সঙ্গে সখ্য রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের। তারাই সবকিছু দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে দিব্যি বছরের পর বছর চালিয়ে আসছে লোক ঠকানো এই বাণিজ্য।
প্রতিদিন ফজরের আযান দিলে ভোর হতে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা হতে আগত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সমস্যা যেমন টাকা বা সোনার গহনা হারানো, স্বামী-স্ত্রীর অমিল, ক্যানসার, প্যারালাইসিস, পেট ব্যাথাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন শত শত লোক এসে তার ভাই আব্দুর রউফের কাছে ১০ টাকা দিয়ে সিরিয়ালের টিকিট কেটে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে। তারপর কথিত গুনিন আরিজুল তার চেম্বারে সকাল ৯/১০ টায় বসলে শুরু হয় রোগী দেখা। চেম্বারে ঢুকে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য ৪/৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ক্ষেত্র বিশেষ ১০/১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে তেল পড়া, পানি পড়া, তদ্বির, গাছ-গাছড়া দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাতে কাজ হোক আর না হোক মনের শান্তি নিয়ে সবাই বাড়ি ফিরে যায়।
শ্যামনগর থানার নকীপুর গ্রামের স্বপন কর্মকারের স্ত্রী অর্পনা রানী এসেছেন- স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া মেটাতে। তাকে ১৫শ টাকার বিনিময়ে ১০০ গ্রামের একটি সরিষা তেলের শিশি দেওয়া হয়েছে। প্রথমবার এসে ৩ হাজার টাকা দিয়েও কোন কাজ হয়নি বলে জানান। নৈকাটি গ্রামের রুহুল আমিন এসেছেন তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে হৃদরোগ সারানোর জন্যে। তাকে তেল মালিশ এবং পানি পড়া নিয়ে ৫হাজার ৪০০ টাকা দিতে হয়েছে।
তালা উপজেলার দেবরায় এবং তার স্ত্রী দিপালি রায় এসেছেন গহনা হারোনোর সমস্যা নিয়ে। প্রথমবার তাকে ৪ হাজার টাকা দিয়ে গহনা ফেরত না পাওয়ায় আবার এসেছে দ্বিতীয় বার দেখাতে তবে এ প্রতিবেদক উপস্থিত থাকা পর্যন্ত তিনি সিরিয়িাল পাননি।
খুলনা জেলার তেরখাদা থানার মনোয়ারা এসেছে দাত ভাঙ্গা রোগের জন্য। তাকে প্রথম বার ২হাজার ১শত টাকার বিনিময়েয় একটি মাদুলি ও পানি পড়া দিয়ে কাজ না হওয়ায় দ্বিতীয় বার তার নিকট থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে একটি গাছের শিকড় দেয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার সমির রায় তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন ক্যানসার রোগের জন্যে। এই প্রথমবার তার নিকট থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়ে তেল পড়া এবং গাছের ঔষধ দেয়া হয়েছে। এর আগে সে ভারতে চিকিৎসা নিতে গেলে তাকে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
কালিগঞ্জ থানার ছনকা গ্রামের রাশিদা বেগম এসেছে তার স্বামী আজিজুল ইসলামের প্যারালাইসিস ভাল করানোর জন্য। কিন্তুসিরিয়াল পাননি বলে জানান। এইভাবে শত শত নারী পুরুষ ভ- কবিরাজ কথিত গুনিন আরিজুলের আস্তানায় দীর্ঘ লাইন দিয়ে চত্বরে বসে আছে। আর বাহিরে নজির এবং মিঠু রোগীদেরকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে হুজুরকে আকৃষ্ট এবং ভাল চিকিৎসা নিতে হলে একটু খরচ দিতে হলেও হুজুর এর ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আগত দর্শনার্থীদের মগজ ধোলাই করে চলেছে। সাংবাদিক দেখে নজির এবং মিঠু দ্রুত শটকে পড়ে।
এব্যাপারে গুনিন আরিজুলের নিকট জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে বলেন লোকজন আমার কাছে আসে তাই দেখি। টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বাইরে তার লোকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
এদিকে, এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিনসহ গ্রামবাসি জালাল, ইউনুস, নরিম, প্রদীপ শ্রীকান্তসহ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট জানান, দীর্ঘ দিনের এই লোক ঠকানো ব্যবসা বন্ধ করা না হলে এলাকায় দুর্ভোগ নেমে আসবে। আরিজুলের এই ভ-ামি ব্যবসা বন্ধ করে সাধারণ মানুষের হয়রানি বন্ধের জন্য বিষয়টি জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও থানার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লষ্কর জায়েদুল ইসলাম বলেন, পুলিশের কাছে কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেনি, যদি করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।