দেশের খবর: ৩০ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকেই নির্বাচিত করে আবার ক্ষমতায় নিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসছে আবার। ভারতের কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
বুধবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির সুধা সদনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার বিপুল আস্থা। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। জনগণের ভোটেই আমরা নির্বাচিত হবো।’
২০১৩ সালে নির্বাচনের সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সহিংসতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রায় ছয়শ স্কুল পোড়ানোর কথা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। মুছে যায়নি প্রিজাইডিং অফিসারসহ অজস্র নাগরিককে হত্যার স্মৃতি। রাস্তা কেটে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে জনগণই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ভোটও দিয়েছিলেন তারা। তিনি বিশ্বাস করেন, সেই জনগণ ফের তাকেই ভোট দেবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের পরে বাংলাদেশে একের পর এক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ সে সব ভোলেননি। আর ভোলেননি বলেই ওইসব ঘটনা যে রাজনৈতিক দল ঘটিয়েছিল, তারা জনসমর্থনহীন হয়ে পড়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নালিশ করার পাশাপাশি বিভ্রান্তি ছড়াতে এবং মিথ্যা কথা বলতে ওরা ভীষণ পারদর্শী। দলের পুরনো বা জিতবেন এমন নেতাদের নমিনেশন দেয়নি ওরা। যে কারণে বঞ্চিতদের কাছে ওদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের যুব সম্প্রদায় নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে মানুষের মন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটাই মুছে ফেলা হয়েছিল। এখনকার নতুন প্রজন্মের মধ্যে সত্যকে জানার একটা আগ্রহ রয়েছে। ইন্টারনেটে খুঁজলেই একাত্তরের অনেক তথ্য এখন জানা যায়। ফলে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার বিষয়টি এখন অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে আওয়ামী লীগের প্রতি যুব সম্প্রদায়ের মত পাল্টে গিয়েছে।
এবারের নির্বাচনি সফরের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সেই ভালোবাসাটা দেখতে পেলাম জানেন! তারা অন্তর থেকে চাইছেন আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক। জনগণ এটা জানেন, আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই তাদের ভাগ্য পরিবর্তিত হবে।’
আওয়ামী লীগ নারী ও তরুণদের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটা আগের মতো অত চ্যালেঞ্জিং নয়। বৈরী পরিবেশও নেই। বরং আমাদের সপক্ষে একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর আগের নির্বাচনগুলোয় একটা বিভেদ লক্ষ করতাম। এবার কিন্তু একচেটিয়া সবার সমর্থনটা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। সেটা টেরও পাচ্ছি।’
বাংলাদেশে কিছু পাকিস্তানপ্রেমী মানুষ আছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, যুদ্ধাপরাধীদের মন পড়ে আছে পাকিস্তানে। তবে তারা সতর্ক আছেন। কারও সঙ্গে বৈরিতা করতে না চাইলেও, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাউকে কোনোভাবেই নাক গলাতে দেবে না বাংলাদেশ।
বিদেশে অবস্থান করা সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশি আসামিদের বিষয়ে শেখ হাসিনা জানান, ওই সব আসামিরা সব সময় বিদেশে বসে দেশের ভিতর একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে চায়। অস্ত্র পাচার, চোরা কারবার এবং দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ওইসব মানুষের অঢেল টাকা। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাতে যারা সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে, সেসব ব্যবসায়ীরাও ওই দলকে টাকা পয়সা দেয়। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় ছিল যখন, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ না করলেও নিজেদেও আখের ওরা গুছিয়ে নিয়েছে। ওই টাকা তো ওরা এখন ব্যয় করে দেশের ভেতরে অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে।’
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে ওই আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
ধানের শীষ প্রতীকে জামায়াতে ইসলামীর দলের নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যাদের নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করল, তাদের কীভাবে নমিনেশন দেওয়া হয়? জামায়াত তো গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। মেয়েদের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া থেকে ঘরবাড়ি দখল করেছিল। ওদের নমিনেশন দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মানুষ শঙ্কিত।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা কামাল হোসেনের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি অবাক হইনি। কারণ কী জানেন? তার শ্বশুরবাড়ি পাকিস্তানে। ছেলেদের একটু শ্বশুরবাড়ির টানটা বেশি থাকে।’
হাসিনা বলেন, ‘ওই যে প্রথমেই বলেছিলাম, আমরাই আসছি। কারণ, মানুষ আমাদেরই চাইছেন।’