স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল) খেলা শেষে সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরে গত বৃহস্পতিবার বাড়ি (কক্সবাজার) যাওয়ার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তখন মুমিনুল হক।
২০১৮ সালে সেঞ্চুরি কয়টা হয়েছে? মুঠোফোনের ওপ্রান্তে নির্লিপ্ত কণ্ঠে মুমিনুলের জবাব, ‘চারটা আল্লাহর রহমতে। আন্তর্জাতিকে চারটা।’ মনে করিয়ে দিতে হলো, টেস্টসহ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এ বছর তার সেঞ্চুরি আসলে নয়টা।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রান হয়েছে কত? বললেন, ‘জানি না রান কত হয়েছে।’ ২০ ম্যাচে ১৭৯১ রান করেছেন। চলতি বছরে এই ফরম্যাটে ক্রিকেট দুনিয়ায় এটাই সর্বোচ্চ। তথ্যটা জানতেই বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান বললেন, ‘তাই নাকি, আলহামদুলিল্লাহ।’
হ্যাঁ, সত্যিই ২০১৮ সালে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন মুমিনুল। তার করা নয় সেঞ্চুরি ও ১৭৯১ রান প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই বছর ক্রিকেট বিশ্বেই সর্বোচ্চ। গৌরবের বিষয় তার পরের স্থানটিও এক বাংলাদেশির। ১৯ ম্যাচে সাত সেঞ্চুরিতে ১৫৭৩ রান করে দ্বিতীয় স্থানে তুষার ইমরান।
রানের দিক থেকে দুই বাংলাদেশির পর সেরা পাঁচের বাকি সদস্যরা হচ্ছেন ইংল্যান্ডের রবি বার্নস (১৫৫৭ রান), দক্ষিণ আফ্রিকার ড্যান ভিলাস (১৫২৫ রান) ও কলিন অ্যাকারম্যান (১৪৮১ রান)। সেঞ্চুরির তালিকায় মুমিনুল-তুষারের পর ছয়টি করে সেঞ্চুরি আছে দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাকবস পিয়েনার, ইংল্যান্ডের ইয়েন বেল, অস্ট্রেলিয়ার উসমান খাজা ও ম্যাট রেনশ’র।
নয় সেঞ্চুরির বছরটা মূল্যায়নে একটা বাক্যই ব্যয় করেছেন মুমিনুল। বলেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ এমন গেলে তো ভালোই যায়।’
তবে রানের জোয়ার বইয়ে দিতে পেরে ব্যাটসম্যান হিসেবে তৃপ্তির কথা জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘অবশ্যই ভালো। নিজের কাছে ভালোই লাগে। এমন বছর তো ভালোলাগারই কথা। সবসময় চাই যে এমন কিছু করতে। শুধু এরকম নয়, আরও ভালো করতে চাই সামনে, এমনই চিন্তা-ভাবনা। চেষ্টা করবো আগামী বছরও যেন এমন ভালো হয়। কোনো কোনো জায়গায় তারপরও হয়তো একটু ঘাটতি ছিল, সেগুলো যদি ভালো করতাম তাহলে দলের জন্য ভালো হতো, আমার জন্যও ভালো হতো।’
মুমিনুল বছরটা শুরু করেছিলেন বিসিএলে দুটি সেঞ্চুরি দিয়ে। যার মধ্যে ছিল একটি ডাবল সেঞ্চুরি (২৫৮)। তারপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি। পরে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করেছেন একটি করে সেঞ্চুরি। এছাড়া জাতীয় ক্রিকেট লিগে একটি, সদ্য সমাপ্ত বিসিএলে আরও দুটি সেঞ্চুরি করেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
অবশ্য বছরের শেষান্তে এসে টেস্টের চার সেঞ্চুরি ও ২৫৮ রানের ইনিংসটাকেই এগিয়ে রাখছেন ২৭ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয় বিসিএলে ২৫৮ যেটা করছিলাম, আসলে ওই সময়ে তো রানে ছিলাম না। ওই ইনিংস থেকে অনেক কিছু শিখছি আমি। প্রত্যেকটা ব্যাটসম্যানেরই রানে ফেরার জন্য একটা নির্দিষ্ট ইনিংস লাগে। ওই ইনিংসটা আমার খুব বেশি কাজে দিছে। ওই ইনিংস থেকে আমি রানে ফেরা শুরু করছি। ওইটা অবশ্যই এগিয়ে থাকবে। কিন্তু আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে চারটা সেঞ্চুরি হয়েছে। কারণ তার মধ্যে দুইটা ইনিংস ম্যাচ জেতানোর মতো। দুইটা ছিল ড্র করার মতো।’
টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি না পাওয়া নিয়ে খুব চিন্তিত নন মুমিনুল। খেলতে থাকলে এক সময় হয়ে যাবে বলেই বিশ্বাস তার। তেমনি বিদেশে টেস্ট সেঞ্চুরির খরা কাটানো নিয়েও বাড়তি ভাবনা নেই তার মনে।
রানের ফল্গুধারা বইয়ে দেয়া ২০১৮ সাল শেষ করেছেন। নতুন বছরের শুরুতেই নিউজিল্যান্ড সফরে তিনটি টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। এই ঈর্ষণীয় ফর্ম কতটা কাজে লাগবে জানতে চাইলে মুমিনুল বলেছেন, ‘প্রত্যেকটা দিনই নতুন দিন। একইভাবে প্রত্যেকটা বছরই নতুন বছর। এ বছর যেটা গেছে, সেটা চলে গেছে। এটা আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। কালকে যেখানে খেলবেন সেখানে নতুন করে শুরু করতে হবে। আমি ওইভাবে চিন্তা করি আর কি। ২০১৮ সালে কি করছি, না করছি এটা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নাই। বর্তমানে কি করবো এটা হলো গুরুত্বপূর্ণ।’
নিশ্চিতভাবেই ২০১৯ সালেও মুমিনুলের ব্যাটে এমন রান উত্সব দেখতে চাইবে সবাই। তাতে বাংলাদেশের লাভটাই যে বেশি।