স্পোর্টস ডেস্ক: অবশেষে তিনি মাঠে। অবশেষে তিনি ক্রিজে। ক্রিকেট বিনোদনের ফেরিওয়ালা ক্রিস গেইল খেলায় নামতেই বিপিএল পায় ভিন্ন মাত্রা। ছড়ায় শতরং। রংপুর রাইডার্সের এই ক্যারিবিয়ান দানোকে দেখার জন্যই তো কাল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি অন্যান্য দিনের তুলনায় ভরে ওঠে বেশি।
নাহ্, দর্শক প্রত্যাশার প্রতিদান গেইল দিতে পারেননি। রংপুর রাইডার্সের এই ওপেনার ৫ বলে ১ রান করেই আউট। আবু হায়দারের বলটিতে কাট করতে চান। কিন্তু বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাটের কানা ছোঁয়াতে পারেন শুধু। উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ মুঠোবন্দি এনামুল হকের। তাতে বোলার আবু হায়দায় উল্লাসে মাতেন ঠিক; কিন্তু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস উচ্ছ্বাসে ভেসে যেতে পারল কই! গেইল শুরুতে আউট হলেও রংপুর রাইডার্সের জয় যে নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই!
২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়নদের ৬৩ রানে অল আউট করেই তো কাজের কাজটি সেরে ফেলে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। ১২ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে। প্রথম ম্যাচ হারের পর টানা দুই জয়—রংপুর রাইডার্স নিজেদের সামর্থ্যের সুবিচার করতে শুরু করছে অবশেষে।
বিপিএল শুরুর আগেই ঢাকায় পা রাখেন গেইল। তবু প্রথম দুই ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের জার্সিতে মাঠে নামতে পারেননি। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড থেকে অনাপত্তিপত্র আসেনি। তা চলে আসায় কাল একাদশে টি-টোয়েন্টির রাজা। মঞ্চটা প্রস্তুত ছিল গেইলের জন্যই। কিন্তু এই ফরম্যাটের জনপ্রিয়তম ক্রিকেটারের মঞ্চে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়ান বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভালোবাসার সম্রাট। মাশরাফি বিন মর্তুজা।
চার ওভারে ১১ রান দিয়ে ৪ উইকেট রংপুর রাইডার্সের অধিনায়কের। বিপিএলে তাঁর ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ইনিংসের শুরুতে মাশরাফির টানা চার ওভারের স্পেল। প্রথম ওভারে উইকেট পাননি, উল্টো এভিন লুইস মারেন বাউন্ডারি। পরের ওভারে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের তামিম ইকবালকে (৪) শিকার। আগের বলই তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে মিস ওই ওপেনারের, পরের বলে লেগসাইডে ঘোরাতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড অনে। নিজের তৃতীয় ওভারে তাঁর জোড়া আঘাত। অফকাটারে বিভ্রান্ত ইমরুল কায়েসের (২) ব্যাটের কানায় লেগে ওঠা ক্যাচ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরেন রবি বোপারা। দুই বল পর আরেক অফকাটারে লুইস (৮) মুঠোবন্দি লং অফে। আর নিজের শেষ ওভারে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথকে (০) মিড অফে ক্যাচ বানিয়ে কুমিল্লার মেরুদণ্ড ভেঙে দেন মাশরাফি।
তাঁর চার শিকারের মধ্যে শফিউল ইসলাম যখন শোয়েব মালিককে (০) ফিরিয়ে দেন, তখন ম্যাচের শুরুতেই প্রতিরোধ শেষ। ১৮ রানেই যে কুমিল্লার ৫ উইকেট তুলে নেয় রংপুর রাইডার্স!
পরের অপেক্ষা—স্মিথের দল কত বেশি রান করে, সেটি নয়। কত কম রানে গুটিয়ে যায়, তা। বিপিএল ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানে অল আউট হওয়ার আশঙ্কা তখন প্রবল। ২০১৬ সালে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে খুলনা টাইটানস যে ৪৪ রানে অল আউট হয়, সেটিও তখন মনে হচ্ছিল অনেক দূরের। শেষে ওই বিব্রতকর রেকর্ড কুমিল্লা এড়ায় ঠিক। তবে ৬৩ রানে অল আউট হয়ে এবারের আসরের সর্বনিম্ন রানে আটকে যাওয়াও কম বিব্রতকর নয়। আর এটি তাদের নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন রান, গতবার ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ৯৬ রান পেরিয়ে। বাকি ১০ সতীর্থের এক অঙ্কের রানের বিপরীতে ৭ নম্বরে নামা শহীদ আফ্রিদি ২৫ রান করেন বলেই ৬৩ পর্যন্ত যেতে পারে কুমিল্লা।
ওই রান টপকে যেতে এতটুকু সমস্যা হওয়ার কথা নয় রংপুর রাইডার্সের। হয়ওনি। ইনিংসের শুরুতে গেইল আউট হওয়া সত্ত্বেও। মেহেদী মারুফ ও রাইলি রুশোর ৫৩ রানের অবিচ্ছিন্ন দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে বিধ্বংসী জয় পায় বর্তমান শিরোপাধারীরা। ৩৯ বলে ৩৬ রান করে অপরাজিত মারুফ, যে ইনিংসে রয়েছে ছয়টি বাউন্ডারি। রুশোর ২৮ বলে অপরাজিত ২০ রানের ইনিংসে কোনো চার নেই, ছক্কা আছে অবশ্য একটি। নিজেসহ ছয় বোলারের হাতে বল তুলে দিয়েও রংপুর রাইডার্সের জয়ের পথে সামান্যতম প্রশ্নবোধক চিহ্ন আঁকতে পারেননি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস অধিনায়ক স্মিথ।
হার দিয়ে এবারের বিপিএল শুরু করার পর মাশরাফির দল জিতল টানা দুই ম্যাচ। প্রতি ম্যাচেই তাঁদের উন্নতি স্পষ্ট। অদম্য হয়ে ওঠা এই রংপুর রাইডার্সকে থামাবে কে, সেই প্রশ্নটিও তাই বড় হয়ে উঠছে ক্রমশ।