দেশের খবর: লেখক-পাঠক-দর্শনার্থীদের মিলনোৎসব শুরু আজ। ছুটির দিন শুক্রবারে দ্বার উদ্ঘাটন হচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র। এই মেলার সঙ্গে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, শহীদদের রক্তস্নাত বর্ণমালা জড়িয়ে রয়েছে। বাংলা একাডেমি আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ থেকে বইপ্রেমীরা নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মেতে উঠবেন।
মেলার সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘বায়ান্নর চেতনা থেকে একাত্তর– আর এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে চুয়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি ও ঊনসত্তরের আন্দোলন। বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা অর্জনের এই পথচলাকে এবারও উদযাপন করা হবে মেলায়।’
একুশে গ্রন্থমেলা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে।
বাংলা একাডেমি থেকে জানানো হয়েছে, এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য ‘বিজয়: বায়ান্ন থেকে একাত্তর (নবপর্যায়)’। একই সঙ্গে ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের যাত্রাও শুরু হবে এই মেলা থেকে।
বিকাল ৩টায় মেলার মূল মঞ্চে মাসব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী মঞ্চে তার পাশে থাকবেন– পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ এবং মিশরের লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক মোহসেন আল-আরিশি। এ মঞ্চেই ২০১৮ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং একাডেমির সামনের ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় তিন লাখ বর্গফুট জায়গায় এবারের মেলা অনুষ্ঠিত হবে। যা গতবারের চেয়ে প্রায় ২৫ হাজার বর্গফুট বেশি। মেলার মূল অংশ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণটির নামকরণ করা হয়েছে ভাষাশহীদ বরকতের নামে। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণকে চারটি ভাগ করে উৎসর্গ করা হয়েছে ভাষাশহীদ সালাম, রফিক, জব্বার ও শফিউরের নামে। ভাষাশহীদের নামে উৎসর্গকৃত এবারের মেলার দুই প্রাঙ্গণের পাঁচটি চত্বরের প্রতিটি চত্বরের সাজসজ্জায় থাকবে আলাদা রঙের ব্যবহার। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ ও ম্যাজেন্ডা রঙের প্রাধান্যে সাজবে এ চত্বরগুলো।
এবারের মেলায় মোট ৪৯৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭০টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ১৫০টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৯৫টি প্রকাশনা সংস্থাকে ৬২০টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৮০টি লিটলম্যাগকে ১৫৫টি স্টল দেওয়া হয়েছে। আর ২৫টি স্টলে দুটি করে লিটল ম্যাগাজিনকে স্থান দেওয়া হয়েছে। অন্য ১৩০টি প্রতিষ্ঠান আলাদা স্টল পেয়েছে। একক ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন, তাদের বই বিক্রি ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশ নেওয়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। এই কর্নারকে শিশু-কিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও ‘শিশুপ্রহর’ ঘোষণা করা হবে।
গ্রন্থমেলায় টিএসসি ও দোয়েল চত্বর উভয় দিক দিয়ে দুটি মূল প্রবেশপথ থাকবে। মূল প্রবেশপথ দিয়ে ঢোকার পর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের জন্য তিনটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছয়টি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ থাকবে। গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তাকর্মীরা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার বসানো হয়েছে। মেলার শেষ দিন বিভিন্ন বিষয়ে গুণিজনদের নামাঙ্কিত পুরস্কার দেওয়া হবে।
এবার ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। যাতে প্রতিদিন পাঁচজন করে লেখক নিজেদের নতুন বই নিয়ে পাঠকদের সঙ্গে কথা বলবেন। শিশু-কিশোরদের মধ্যে যারা লেখালেখি করে সেই ক্ষুদ্র লেখকদের উৎসাহিত করার জন্য এবার বিশেষ ব্যবস্থাও থাকবে। শিশু চত্বরে ‘তারুণ্যের বই’ নামে নতুন একটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। যাতে শিশু-কিশোরদের বই পাঠে উৎসাহিত করা হবে।