স্বাস্থ্য ও জীবন: মারণরোগের ফাঁদ মানেই মৃত্যুর দিকে আরও কিছুটা এগিয়ে যাওয়া। বর্তমান জীবনযাত্রায় যে সব মারণ অসুখ নিয়ত আমাদের ভাবনায় রাখে, তার অন্যতম ক্যান্সার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর মতে, ভারতের মতো দেশে প্রতি দিনই ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও আধুনিক জীবনযাত্রার নানা ক্ষতিকারক দিকও এমন মারণ অসুখের দিকে ঠেলে দেয় আমাদের।
তাই জীবনযাপনে নিয়ন্ত্রণ আনা ও ক্ষতিকারক অভ্যাসগুলি থেকে সরে থাকা যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রতি দিনের খাদ্যতালিকাতেও যোগ করা উচিত এমন কিছু খাবার, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার প্রতিরোধেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
ভাজাভুজি, তেল-মশলার খাবার কমিয়ে বরং খাদ্যতালিকায় যোগ করুন এমন পুষ্টিকর কিছু উপাদান, যা এই মারণরোগগুলি ঠেকাতে অনেকটাই সাহায্য করবে আপনাকে।
ব্রকোলি: ক্যানসার প্রতিরোধে ব্রকোলির ভূমিকা অনস্বীকার্য। ব্রকোলিতে সালফোরাফেন থাকায় তা ক্যানসার কোষ ধ্বংসে সক্ষম। কোলন, প্রস্টেট ও ব্রেস্ট ক্যান্সারে ক্ষেত্রে এই সব্জি বিশেষ কার্যকর।
রসুন: সালফারে পূর্ণ অ্যালিসিন ও ডায়াল্লিল ডিসালফাইড থাকায় রসুন নানা অসুখ প্রতিরোধ করতে পারে। টিউমার জাতীয় অসুখের প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে রসুন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রস্টেট ক্যানসার ঠেকাতে রসুনের বিকল্প নেই।
হলুদ: এই মশলা এমনিতেই প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক। কোলনে কোনও রকম টিউমার বা ঘা কমাতে হলুদ বিশেষ উপকারী। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, টানা এক মাস খাবারের সঙ্গে চার গ্রাম করে হলুদ মশলা হিসাবে যোগ করার পর কোলন ক্যানসারে আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রুখতেও এই মশলা বিশেষ উপকারী।
অলিভ অয়েল: রান্নায় অলিভ অয়েল যোগ করার পক্ষপাতী ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সুকুমার সরকারও। তাঁর মতে, অলিভ অয়েল কেবল মেদ ঝরায় এমনই নয়, রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করা বা অতটা না পারলেও অন্তত স্যালাডের উপর কিছুটা অলিভ অয়েল ছড়িয়ে খেলে তা কাজে আসে। ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রুখতে এই তেলের ভূমিকা রয়েছে।
ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত মাছ: খাদ্যনালির ক্যান্সার রুখতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত (স্যামন, ম্যাকারেল ইত্যাদি) মাছ খুবই উপকারী। ওমেগা থ্রি থাকায় এই সব মাছ খেলে তা ক্যান্সারপ্রবণ কোষের বৃদ্ধি রুখে দেয়। তা ছাড়া এতে ভিটামিন ডি থাকায় তা ত্বকের ক্যান্সার রুখতেও খুবই কার্যকর।
গাজর: গাজর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট জাতীয় খাবার ফ্যাট অক্সিডেশনে বাধা দেয় ও শরীরে ক্যান্সারের কোষ উৎপাদন কমায়। দুনিয়া জুড়ে বিভিন্ন গবেষণায় গাজরের ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতার কথা উঠে এসেছে। গাজর সেদ্ধ করে স্যালাড থেকে শুরু করে বিভিন্ন রান্নায় গাজর যোগ করলে তা কোলন ক্যান্সার, পাকস্থলীর ক্যান্সার রুখতে সাহায্য করে। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির সমীক্ষা অনুসারে, প্রতি দিনের খাদ্যতালিকায় গাজর যোগ করলে প্রস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাবনা প্রায় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ কমে যায়। ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধেও গাজরের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
লেবু-জল: লেবু শরীরের টক্সিন সরিয়ে শরীরকে বিষমুক্ত রাখে। প্রতি দিন গরম জলে একটা গোটা পাতি লেবুর রস মিশিয়ে খেলে শরীরের টক্সিন দ্রুত বেরিয়ে যায়। সারা দিনে ৩-৪ বার এই পানীয় খেলে তা ক্যান্সারের আক্রমণ ঠেকায় বলেই মত চিকিৎসক সুকুমার সরকারের। গরম জলের সঙ্গে লেবু মিশিয়ে খাওয়া হয় বলে অম্লজনিত সমস্যা থাকলেও লেবুর রস এ ক্ষেত্রে সমস্যা করে না।