রাজনীতির খবর: প্রেমঘটিত বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত ও পরে আধিপত্য ধরে রাখার জের ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে আজ রোববার কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকারী প্রক্টরসহ উভয় পক্ষের সাতজন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বাস ও একটি মাইক্রোবাস।
এই ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আজ বিকেলে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা–কর্মী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষের কর্মী আইয়ুব তুহিন ও সভাপতির পক্ষের কর্মী মেহেদী হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে পছন্দ করতেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে তুহিন এই ছাত্রীর সঙ্গে গল্প করছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তুহিনকে মারধর করেন মেহেদী হাসান ও তাঁর বন্ধুরা। এতে তুহিনের মাথা ফেটে যায়। এর কিছু সময় পর তুহিনের বন্ধুরা একত্রিত হয়ে মেহেদী হাসান ও তাঁর বন্ধুদের মারধর করেন।
এ ঘটনার জের ধরে আজ সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলামের পক্ষের নেতা-কর্মীরা। সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীনের পক্ষের নেতা–কর্মীরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলে তাঁরা ধাওয়া দেন। পরে পেছনের ফটক (পাটুয়াটুলী) দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে সহকারী প্রক্টর শাহীন মোল্লা আহত হন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘পূর্ব ঘটনার জেরে মারামারির সূত্রপাত। প্রথমে আমার কর্মীদের ওপর সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা আক্রমণ করেছে।’
তবে সভাপতি তরিকুল ইসলামের দাবি, ‘গত বৃহস্পতিবারের ঘটনা নিয়ে আজ আমাদের বসার কথা ছিল। কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা তার আগেই আমার কর্মীদের ওপর আক্রমণ করছে। আমার ছেলেরাও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীদের ধাওয়া দিয়েছে। আমি অসুস্থ থাকার কারণে ক্যাম্পাসে যেতে পারিনি।’
ভীতিকর পরিস্থিতি :
পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, বিজ্ঞান ভবন ও ক্যানটিনের সামনে পাঁচ থেকে ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। ভাঙচুর করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যবহৃত তিনটি বাস ও একটি মাইক্রোবাস। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে ক্যাম্পাসে ছোটাছুটি শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষের নেতা–কর্মীদের হাতে দেশীয় অস্ত্র, ছুরি, চাপাতি, রড ও লাঠিসোঁটা ছিল। বেশির ভাগ লোকই ছিলেন হেলমেট পরিহিত। দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশের কোতয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) বদরুল হাসান বলেন, পুলিশ দুই পক্ষের মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কর্মী খালিদ মাহমুদ, সামসুল হুদা গাজী, মো. মামুন, মাহফুজ, রেজওয়ান, ইশরাক চৌধুরী, নোমান নামের সাতজন আহত হন। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে কাল সোমবার জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য মীজানুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডিকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কমিটি স্থগিত ও তদন্ত কমিটি
আজ বিকেলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ক্যাম্পাসের স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং দলীয় শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে নেতাদের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার ঘাটতি পরিলক্ষিত হওয়ায় তাঁদের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।
একই সঙ্গে ছাত্রলীগের গত কমিটির নেতা সোহান খান, আরেফিন সিদ্দিক সুজন, আল নাহিয়ান খান জয় ও ইয়াজ আল রিয়াদকে নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা পেয়েছি। ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিস্তারিত জানা যাবে।’