দেশের খবর: হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িতদের মধ্যে সাতক্ষীরার তালিকায় আছেন অনেক ব্যবসায়ীও। এ তালিকায় রয়েছেন একাধিক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও রাজনৈতিক ব্যক্তি। একটি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের নাম-পরিচয় উঠে এসেছে। হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার ঠেকাতে সুনির্দিষ্ট চারটি সুপারিশ করা হয়।
খুলনা বিভাগে হুন্ডি ব্যবসার মূলহোতা ও হুন্ডি ব্যবসায়ী যারা : গোয়েন্দা তালিকা অনুযায়ী খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় তালিকাভুক্ত ১২ জন হুন্ডি ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা হলেন- তাপস সাহা, সুভাস চন্দ্র, বিকাশ চন্দ্র সাহা, অজিত সাহা, সুভাস দাস, দুই ভাই স্বপন অধিকারী ও সাধন অধিকারী, হর বিলাশ, অরুণ সাহা, উত্তম দাস, রাসু বিশ্বাস এবং পরিমল মণ্ডল।
সাতক্ষীরায় ৩৮ জন : সাতক্ষীরা জেলায় পাঁচ স্তরে ৩৮ জন হুন্ডি ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করেছেন গোয়েন্দারা। এর মধ্যে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা বা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ও পাচারে জড়িত রয়েছেন ১৭ জন। তারা হলেন- মুকুন্দ ভারতী, হরেন্দ্র নাথ রায়, জালাল উদ্দিন গাজী, দুই ভাই গৌরদত্ত ও জয়দেব দত্ত, আশুতোষ দে, দীনবন্ধু মিত্র, বাবু কর্মকার, সুমন কর্মকার, বিশ্বজিৎ মণ্ডল, গণেশ চন্দ্র শীল, গোপাল চন্দ্র দে, বাসুদেব দত্ত, দেব কুমার দে, রবীন্দ্রনাথ দে, রাশেদুল ইসলাম ও লিয়াকত হোসেন।
একই জেলায় আটজনকে অবৈধ হুন্ডির সিন্ডিকেটপ্রধান বা মূলহোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা হলেন- বাপ্পি খোকন ওরফে সুন্দর খোকন, আদিত্য মজুমদার, গোলাম মুর্শেদ, নাসির, ইয়ার আলী মেম্বার, আল ফেরদৌস আলফা, ইসরাইল গাজী ও মনিরুল ইসলাম।
সাতক্ষীরার বিভিন্ন ব্যবসায়িক সাইনবোর্ডের আড়ালে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে যারা সন্দেহজনক মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করেন- সেই ধরনের নয়জনের নাম এসেছে গোয়েন্দা তালিকায়। তারা হলেন- অনিল বাবু, গৌরি বাবু, আদিত্য মজুমদার, আবু হাসান, আজহারুল ইসলাম, ফিরোজ হোসেন, নজরুল ইসলাম, আজিজুল ইসলাম এবং খালিদ কামাল। ওই তালিকায় হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারে জড়িত ভোমরা স্থলবন্দরের তিনজন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও একটি মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের নামও উঠে এসেছে। তারা হলেন- ওয়াহেদুল ইসলাম, ইসরাইল গাজী, শাহানুর ইসলাম শাহিন এবং লোকনাথ মানিচেঞ্জার।
যশোর জেলায় নানা স্তরের ৬৭ জন : গোয়েন্দা তালিকা অনুযায়ী যশোর জেলায় হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেন মোস্তাক আলী মোস্তান, আশরাফুল ইসলাম, বাবু মিয়া, সাদেক আলী, আশিক, বজলুর রহমান, মুকুল, আলিমুর, ইয়ানুর রহমান ইয়ান, লিঙ্ককু, জসিম, টিটু বিশ্বাস, মহসীন, মনিরুজ্জামান, মনির হোসেন, বাবুল হোসেন, আবদুল মোমিন, আসিফ রায়হান, কদর আলী, ইমরান হোসেন, বিল্লাল হোসেন, রনি হোসেন, সবুজ মিয়া, মনিরুল ইসলাম এবং খোকন। এই জেলায় হুন্ডি সিন্ডিকেটের প্রধানরা হলেন- আবুল বাসার, সীমর শিং, মো. মুকুল, নাসির উদ্দিন এবং বাবলুর রহমান।
যশোরে ব্যবসায়িক সাইনবোর্ডের আড়ালে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে যারা সন্দেহজনক মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করেন- সেই তালিকাও করেছেন গোয়েন্দারা। এতে সমীর শিং, আবদুল মোমিন, নাসির উদ্দিন, আকরাম হোসেন, কোরবান আলী, মাসুদ, শহিদ, সেলিম, সোনাতন, রাকেশ, পিয়ারুল, বকুল, মামুন, আব্বাস আলী, জাহিদুল ইসলাম, আবুল কালাম, শহিদুল ইসলাম এবং হোসেন আলীর নাম রয়েছে।
এ ছাড়া এই জেলায় হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারে জড়িত সাত সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী হলেন- মো. মুকুল, আকতার হোসেন, মনিরুজ্জামান, কামাল উদ্দিন ওরেফে টাক কামাল, আসাদুজ্জামান আসাদ, রিপন ও জয়নাল। একই তালিকায় আবুল বাশার, পারভেজ, রুবেল ও মোকতার আলী নামে চারজন মানিচেঞ্জার মালিকের নামও রয়েছে। এ ছাড়া নজরুল ইসলাম, আকতার হোসেন, আলমগীর হোসেন, একরামুল, শওকত আলী, মিঠু ও অহিদুল ইসলাম নামে সাতজন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের নাম রয়েছে তালিকায়।
নড়াইলে ২৮ জন হুন্ডি ব্যবসায়ী : হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা বা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ও পাচারে জড়িত রয়েছেন সুবোধ কুমার রায়, স্বপন কুমার বিশ্বাস, জগদীশ কুমার বিশ্বাস, দিলীপ কুমার সাহা, নারায়ণ কর্মকার, গোবিন্দ রায় ওরফে তেল গোবিন্দ, শ্যামল কুমার ঘোষ, তপন দত্ত, গোলাম মোর্শেদ, অশোক কুমার কুণ্ডু, সঞ্জয় সাহা, মহিবুল ইসলাম মোল্যা, শাহীনূর শেখ, বিশ্বজিৎ ওরফে বিশ্ব, খোকন নন্দি, দিলীপ কুমার রায়, সাবু খান, শাহীন গাজী, মুক্তাদের খা, কৃষ্ণ সরকার, ছিকুল মিয়া, শিমুল, প্রদ্যুৎ কুমার ছোট্টু, ফনিস দেব, উজ্জ্বল রায় এবং মহানন্দ দেব। এই জেলায় হুন্ডি সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে দুইজনের নাম উঠে এসেছে। তারা হলেন- রফিকুল ইসলাম মোল্যা এবং উজ্জল মোল্যা। ঝিনাইদহ জেলায় এই সিন্ডিকেট প্রধান হলেন ফারুক আহম্মেদ কাজল।
কুষ্টিয়ায় ১৫ হুন্ডি ব্যবসায়ী : কুষ্টিয়া জেলায় ব্যবসায়িক সাইনবোর্ডের আড়ালে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে সন্দেহজনক মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করেন ১৪ জন। তারা হলেন- স্বপন কুমার সাহা, শাহিন, আরিফুর রহমান, শামছুল হক, নাসিম উদ্দিন আজিম, হাবিব, স্বপন কুমার দত্ত, চিত্তরঞ্জন পাল, অশোক কুমার কেজরিওয়ালা, কানাই কর্মকার, কাজী মুজাহেদুল ইসলাম, শাহিদুল ইসলাম, নান্টু এবং দুই ভাই ষষ্টি কুমার ও রাজকুমার।
দিনাজপুর : গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় দিনাজপুরের হুন্ডি কারবারের সঙ্গে জড়িতরা হলেন- হাকিমপুরের দক্ষিণ বাসুদেবপুরের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে জসিমুদ্দিন; একই এলাকার কালিচন্দ্র দাসের ছেলে স্বপন দেবনাথ, বাবলু রহমান, সাইফুল ইসলাম, হযরত আলী, মো. মমতাজ, আব্দুর রশিদ, গিয়াস উদ্দিন, আতিকুর রহমান, আতিয়ার রহমান, ইটভাটা ব্যবসায়ী সৈয়দ খালেদ আহমেদ, মোফাজ্জল হোসেন, আব্দুর রশিদ, নূর এ কামাল, আব্দুস সামাদ, শেরেকুল ও তাহকিক।
ঠাকুরগাঁও : তৈয়ব আলী, আজিজুল হক, আজিজ খাটিয়ার, মো. রফিক, হাফেজ, হবিবর রহমান, তুশারসিং, নোমু, মনিরুল ইসলাম, মো. সোহেল রানা, আওয়াল, নুরুজ্জামান, একরামুল, জাহেরুল ইসলাম, মুকসেদ, বোচল, মো. আকালু ও লাজিব উদ্দিন।
পঞ্চগড় : তেঁতুলিয়ার ইসলামবাগের মো. শামসুল মণ্ডল, নুরুজ্জামান, আনোয়ার আলী, শাহজাহান আলী, আবুল কালাম, জাহিদুল, দুলু মিয়া, হারুন আলী, মন্টু হোসেন, গোলাম রব্বানী, সাইফুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, বাবুল চন্দ্র, হরিকেশ, রফিকুল ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেন, আব্দুল করিম, জালাল হোসেন, খেরজাহান, আশ্রাফ আলী, নজরুল ইসলাম, খলিলুর রহমান, আসাদুল ইসলাম, মো. নয়ন, শহীদুল ইসলাম, মেহেদী হাসান বাবলা, আনোয়ার হোসেন, বৈকুণ্ঠ রায়, রেজাউল করিম, হারুন অর রশিদ, জয়দেব কুণ্ঠু, সাইদুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, আলমগীর, আব্দুর রহমান ও লতিফ তারিন। সন্দেহজনক লেনদেনে জড়িত রয়েছেন টি ইসলাম ট্রেডার্সের তফিজুল ইসলাম, আখি অ্যান্ড অপু ট্রেডার্সের মোজাফর হোসেন। হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মধ্যে জড়িত রয়েছে প্রহর ইন্টারন্যাশনাল, জয়নুল আবেদীন কোম্পানি, শুভ এজেন্সি, ড্রিমস আনলিমিটেড ও সেতু ইন্টারন্যাশনাল।
কুড়িগ্রাম : এ তালিকায় রয়েছেন মাইদুল ইসলাম বাবু, মোমিনুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান, হামিদুল ইসলাম, হোসেন আলী, আব্দুস ছালাম, মো. আলম, তুফান মেম্বার, মঞ্জু মিয়া, শফিকুল ইসলাম, আকবর হোসেন, আনিছুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, আবুল বাহার, খায়রুল ইসলাম, সোহরাব হোসেন ও শাহ আলম।
লালমনিরহাট : তালিকায় আছেন থানাপাড়ার ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী শাখাওয়াত হোসেন সুমন, মিজানুর রহমান, পাটগ্রামের রুহুল আমিন বাবলু, সায়েদুজ্জামান, হুমায়ুন কবীর, রাজ্জাক, আমির হামজা, সুশান্ত কুমার ধর, রফিকুল ইসলাম ও আবু হেনা মো. এরশাদ হোসেন সাজু। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারে জড়িত আছেন মো. সিরাজুল হক ও মাহমুদুল হাসান সোহাগ।
হুন্ডি ঠেকাতে চার সুপারিশ : গোয়েন্দা সংস্থার ওই প্রতিবেদনে দেশে-বিদেশে অর্থ পাচারকারী সিন্ডিকেট সদস্য, পৃষ্ঠপোষক ও এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাঙালি অধ্যুষিত যেসব এলাকায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে হুন্ডি ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে, সেই এলাকার সংশ্নিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর দেশের মানি লন্ডারিং আইনে নিষিদ্ধ। তাই দেশে-বিদেশে অর্থ পাচার যে কোনো মূল্যে বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারের কারণে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়তে পারে। এতে বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। আমদানিকারকদের ডলার চাহিদা মেটানো বাধাগ্রস্ত হবে- যা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সূত্র: সমকাল(১৮/০২/২০১৯)