খেলার খবর: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের হেগলি পার্কের কাছে আল নুর মসজিদসহ দুটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় বন্দুকধারীর হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। নিউজিল্যান্ড সফররত বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শেষে সেখানেই নামাজে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অল্পের জন্য তাঁরা বেঁচে যান।
ঘটনার পর পরই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা হোটেলে ফিরে আসেন। তাঁদের এখন হোটেল থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।
আগামীকাল শনিবার এই হেগলি ওভাল মাঠে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড তৃতীয় টেস্ট হওয়ার কথা ছিল। যদিও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে টেস্টটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
ক্রাইস্টচার্চ শহরের আল নুর মসজিদে বন্দুকধারীর এ হামলায় অনেকেই নিহত হয়েছেন। বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, এতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। আবার স্থানীয় একটি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে নিহতের সংখ্যা বলা হয়েছে ২৯ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা মসজিদের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত অবস্থায় মানুষকে পড়ে থাকতে দেখেছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনো কিছু বলা হয়নি।
এই ভয়াবহ ঘটনা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাজিমউদ্দিন চৌধুরী রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। দলের নিরাপত্তা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।’
মুখপাত্র জালাল ইউনুস সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘বাসে করে দলের বেশিরভাগ সদস্যই মসজিদে গিয়েছিলেন এবং যখন হামলার ঘটনাটি ঘটে, ঠিক তখনই তাঁরা মসজিদের ভেতর প্রবেশ করতে যাচ্ছিলেন।’
কিন্তু ভেতরে গোলাগুলির শব্দ শুনে দলের সদস্যরা সেখান থেকে নিরাপদে সরে আসেন। দলের কোনো সদস্যই এ ঘটনার মধ্যে পড়েননি।
জালাল ইউনুস আরো বলেন, ‘দলের সদস্যরা নিরাপদে আছেন। কিন্তু মানসিকভাবে তারা হতবাক। আমরা তাদের হোটেল থেকে বের না হওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কন্ডিশনিং কোচ মারিও ভিল্লাভারায়েন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে বলেছেন, ‘দলের সদস্যরা বাসে করে যাচ্ছিলেন। যখন বাস থেকে নামতে যাবেন, ঠিক তখনই গোলাগুলি শুরু হয়।’
‘তাঁরা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, তবে ভালো আছেন,’ যোগ করেন মারিও ভিল্লাভারায়েন।
আল নুর মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। তিনি হোটেলে ফিরে টুইট করেছেন। টুইটবার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমাদের পুরো দল বন্দুকধারীদের কাছ থেকে নিরাপদ ছিল।’
এ ঘটনাকে একটি ভয়ানক অভিজ্ঞতা বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ দলের এই ক্রিকেটার এবং দেশবাসীর কাছ থেকে দোয়া চেয়েছেন।
সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম লিখেছেন, ‘ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার সময় আল্লাহ আজ আমাদের রক্ষা করেছেন… আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান।’
স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্রাইস্টচার্চের শহরতলি লিনউডের মসজিদেও সশস্ত্র পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। হেগলি পার্ক এলাকা ও আশপাশের লোকজনকে বাড়ি থেকে বের হতে মানা করা হয়েছে। এই পার্কের সামনের ডিয়েন অ্যাভিনিউয়ে আল নুর মসজিদটি অবস্থিত।
পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ বিবিসিকে বলেছেন, এখানে ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার স্কুল ও চার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গোটা এলাকা পুলিশ ঘিরে রেখেছে। আকাশে হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, তাঁরা সেখানে কয়েকটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। কিছু লোকজনকে আহত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে হতাহতের বিষয়টি এখনো পুলিশ বা শহর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মোহন ইব্রাহিম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী নিউজিল্যান্ড হ্যারাল্ডকে বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, বৈদ্যুতিক কোনো বিভ্রাটের কারণে বোধ হয় এ রকম শব্দ হচ্ছে। কিন্তু পরক্ষণেই দেখলাম, লোকজন দৌড়াতে শুরু করেছে। সেখানে আমার এক বন্ধুও ছিল। তাঁকে ডাকলেও কোনো সাড়া পাইনি। আমি তাঁর জন্য চিন্তিত।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বন্দুকধারীকে পালিয়ে যেতে দেখেছেন তাঁরা।