নিজস্ব প্রতিবেদক: কলারোয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করছেন।
গত কয়েক দিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার মৃদু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে থানা পুলিশ প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বক্ষম হয়। এদিকে উপজেলা আ’লীগের নেতারা নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভাগ হয়ে জমিয়ে তুলেছেন ভোটের মাঠ।
পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কলারোয়ায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন দু’জন প্রার্থী। এরমধ্যে দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন। এবং দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র (আনারস প্রতীক) প্রার্থী হয়েছেন কলারোয়া উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু ।
এদিকে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে সাবেক সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) সংসদ সদস্য বিএম নজরুল ইসলাম এবং সাবেক উপজেলা আহবায়ক সাজেদুর রহমান খান চৌধুরী মজনুর নেতৃত্বে দলীয় অনেক শীর্ষ নেতা স্বতন্ত্র (আনারস) প্রার্থীকে সমর্থন এবং তার নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফলে নির্বাচনের মাঠে ভোটের সমীকরণে যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
অপরদিকে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভোটযুদ্ধ এবং দলীয় সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ নেতারা ভাগ হয়ে প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে তৃণনমুল নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন। তবে উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব স ম মোরশেদ আলী ও রবিউল আলম মল্লিক বলেন, তৃণমুল নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী মাঠে তাদের সাথেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে। তারা দাবি করে বলেন, নির্বাচনে সব প্রার্থীই আ’লীগের। আমরা দলের বিরুদ্ধে নয়, দলীয় (স্বতন্ত্র) প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। কলারোয়াকে দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আজ উপজেলা আ’লীগের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।
অন্যদিকে নৌকা প্রতীকের সমর্থক এক আ’লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান জানান, কিছু নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিলেও উপজেলায় উন্নয়ন ধারা বজায় রাখতে নেতা-কর্মীরা ভেদাভেদ ভুলে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জয়ী করবেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কলারোয়া উপজেলায় বিএনপির শক্ত অবস্থান ও জনসমর্থন থাকলেও কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটির নেতারা। এছাড়া এলাকায় রয়েছে জামায়াতের নিজস্ব ভোট ব্যাংক তবে বর্তমানে সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্থ এই দলটিও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছে। মূলত এবারের নির্বাচনে আ’লীগের বিরুদ্ধে আ’লীগের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থিত নৌকা প্রতীক নিয়ে উপজেলা আ’লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন ও আনারস প্রতীক নিয়ে (স্বতন্ত্র) প্রার্থী উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু।
তারা বলেন, কলারোয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী ইতিহাসে চেয়ারম্যান পদে মূলত নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়েছে কিন্তু এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়া এবং জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ অন্য কোন দলের প্রার্থী নেই। সে ক্ষেত্রে ভোটের মাঠে অন্য দলের সমর্থকদের ভোট পেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসতে পারেন যেকোন একজন প্রার্থী। তারপরও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে বলে জানান কয়েকজন ভোটার।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে তার কর্মী-সমর্থকদের বিরাট সংখ্যায় সক্রিয় দেখা গেছে। অপরদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ স্বপন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতির দায়ীত্ব পালন করছেন। তার পক্ষে মাঠে রয়েছেন উপজেলার প্রায় সকল ইউপি চেয়ারম্যান।
কলারোয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের সহকারি রির্টানিং অফিসার মাসুদুর রহমান জানান, ২৪ মার্চ (তৃতীয় ধাপে) অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৮৫ হাজার ৭৩০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৯১ হাজার ৬৫৩ জন আর মহিলা ভোটার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৭৭ জন। নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৫টি। তিনি বলেন, নির্বাচনী সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এছাড়া দুই প্যানেলে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন, স্বতন্ত্র আনারস প্রতীকের প্যানেলে ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে উড়োজাহাজ প্রতীক নিয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কাজী আসাদুজ্জমান সাহাজাদা ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে হাঁস প্রতীক নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী শাহানাছ নাজনীন খুকু। ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে প্রার্থী হয়েছেন, মাইক প্রতীক নিয়ে জেলা আ’লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এইচ এম আরাফাত হোসেন ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) কলস প্রতীক নিয়ে আ’লীগ নেত্রী ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা আনোয়ারা ময়না। এছাড়া সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে এককভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ফুটবল প্রতীক নিয়ে আ’লীগ নেত্রী রাজিয়া সুলতানা দুলালী।