ডেস্ক রিপোর্ট: আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বৃষ্টি এসে হানা দিয়ে অনেক কিছুই এলোমেলো করে দেয়। টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেওয়া বাংলাদেশের বিপক্ষে ভালো শুরু পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে বৃষ্টির কারণে ম্যাচ নেমে আসে ২৪ ওভারে। প্রথমে ব্যাট করে ১৫২ রান তোলে জেসন হোল্ডারের দল। তবে ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মের কারণে বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্য ২১০ রান হয়ে দাঁড়ালে আরেকটা ফাইনাল হারের শঙ্কা পেয়ে বসে ক্রিকেটভক্তদের। আগের ছয়টি ফাইনাল হারের স্মৃতি তখন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল বাংলাদেশ সমর্থকদের মনে।
তবে শুরুতেই সব শঙ্কা দূরে ঠেলে দিয়ে দলকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন টাইগার ওপেনার সাতক্ষীরার ছেলে সৌম্য সরকার। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে না নামা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে কোণঠাসা হয়ে যায় ক্যারিবীয় বোলিং আক্রমণ। তাঁর ব্যাটিং তাণ্ডবে বাংলাদেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবালও কিছুটা পার্শ্বচরিত্র হয়ে যান। অফস্পিনার অ্যাশলে নার্সের করা ইনিংসের প্রথম ওভার থেকেই শুরু করেছিলেন প্রতি-আক্রমণ। কঠিন জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে মাত্র ৫.৩ ওভারে ৫৯ রানের জুটি গড়েন। ষষ্ঠ ওভারে তামিমের পর সাব্বিরও বিদায় নেন।
কিন্তু দ্রুত দুই উইকেট পড়ে গেলেও একটুও দমে যাননি সৌম্য। আস্থার সঙ্গে নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে থাকেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ‘পাওয়ার প্লে’ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তৃতীয় উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে মাত্র ৩৩ বলে ৪৯ রানের জুটি গড়েন। পেস এবং স্পিন, দুই ধরনের বোলিংয়ের বিপক্ষেই খেলতে থাকেন আস্থার সঙ্গে। বাজে সময় পেছনে ফেলে আসা সৌম্যর প্রতিটি শট থেকে যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছিল আত্মবিশ্বাস। পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে এক রান নিয়ে মাত্র ২৭ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন সৌম্য সরকার।
ত্রিদেশীয় এই সিরিজে এটা ছিল সৌম্যর টানা তৃতীয় অর্ধশতক। দলীয় ১০৯ রানে বাঁহাতি পেসার রেমন রেইফারের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তাঁর আগে ৪১ বলে ৯টি চার এবং বিশাল তিনটি ছক্কায় ৬৬ রান তুলে ফেলেছেন বাংলাদেশ ওপেনার। মাত্র ২৪ ওভারে ২১০ রানের লক্ষ্য তাড়া করা সহজ ছিল না মোটেই। তবে সৌম্য সরকারের ১৬০.৯৮ স্ট্রাইক রেটের মারকাটারি ইনিংসটাই বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা জয়ের ভিত গড়ে দেয়। মোসাদ্দেক হোসেন যদি বাংলাদেশের ইনিংসে তুলির শেষ আঁচড়টা দিয়ে থাকেন, তাহলে ক্যানভাসটা গড়ে দেওয়ার কৃতিত্ব সৌম্যর।
অথচ, এ বছরের শুরুতে বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফরে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচেই ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থ হয়েছিলেন এই টাইগার ওপেনার। ২০১৮ সালে দেশের মাটিতে দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি সেঞ্চুরি এবং ভগ্নশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি ৮০ রানের ইনিংস ছাড়া বলার মতো আর কোনো স্কোর করতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচগুলোতে নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা মারকুটে সৌম্য এই মৌসুমের ঘরোয়া ক্রিকেটেও ছিলেন চরম ব্যর্থ।
সৌম্য কীভাবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পান, তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত মাঠেই সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা তিন অর্ধশতক করে বিশ্বকাপের আগে দুরন্ত ফর্মের ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন সৌম্য সরকার। পাশাপাশি বিশ্বকাপে তামিম ইকবালের ওপেনিং সঙ্গী হওয়ার ক্ষেত্রেও নিজেকে এগিয়ে রাখলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় প্রতিটি ম্যাচেই এমন সৌম্যকেই দেখতে চাইবে বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা।