বিশেষ ডেস্ক: বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে গেলেন অঙ্কিতা; বাবার মুখে সাতক্ষীরার গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছেন তিনি। শৈশবে স্বপ্ন দেখেছিলেন, পাসপোর্ট হাতে পেলেই ছুট দেবেন ঠাকুরদা’র বাড়ি বাংলাদেশে। মাস দুয়েক আগেই তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে; ফরিদপুরে একটি কনসার্টে অংশ নিতে এসেছিলেন।
“নেমেই বাংলাদেশকে প্রণাম করেছি। সেই সময় অদ্ভূত অনুভূতি হচ্ছিল-সেটা বলে বোঝানো যাবে না।”বাংলাদেশে বারবার আসতে চান তিনি; বিভিন্ন কনসার্টের পাশাপাশি ঢাকার চলচ্চিত্রের গানে গাওয়ার সুযোগ পেলে ‘ভালো লাগবে’ বলেও জানান তিনি। কাজ করতে চান টালিউড, বলিউডের চলচ্চিত্রেও।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানে প্লেব্যাকের প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বললেন, “আমি প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।”
জি-বাংলার সংগীত বিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা’-তে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই বদলে গেছে অঙ্কিতা ভট্টাচার্যের চেনা দুনিয়া; সুরের মায়াজাল ছড়িয়ে রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া এ ষোড়শীকে দেখতে নিজের দেশের মানুষ তো বটেই বাংলাদেশ থেকেও অনেকে ভিড় করছেন তার বাড়িতে।
সিম্প্রতি বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমে দেওয়া নতুন এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া এ শিল্পী। ভারতের উত্তর ২৪ পরগণার গোবরডাঙার শ্রীপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া অঙ্কিতার আদি নিবাস বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কলারোয়ায়।
প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে পাড়া-প্রতিবেশী, কলেজের শিক্ষক-সহপাঠীদের কাছ থেকে ভালোবাসা পাচ্ছেন; কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশের ভক্তরাও ফুলের তোড়া হাতে তাকে দেখতে ভিড় করছেন শ্রীপুরে।
“বাংলাদেশ থেকে অনেকে আমাকে দেখতে এসেছে। তারা ঘরে এসে আমাকে সংবর্ধনা দিচ্ছে। তারা আমার পরিচিত কেউ না; কলিগও না, বন্ধুও না; তারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী। তাদের ভালোবাসা পাওয়া আমার আমার জন্য গর্বের।”
সেই স্বপ্নের পথে ছায়া হয়ে বাবা-মাকেও পাশে পাচ্ছেন অঙ্কিতা। তার মা শ্বাশতী ভট্টাচার্য বলেন, “বাবা-মা হিসেবে আমরা ওকে সমর্থন দিয়ে যাব। বাবা-মা’র কাছে আজীবন মেয়ে ছোট্টটিই থাকে। যতদূর সম্ভব ওর জন্য আমরা চেষ্টা করে এসেছি। আমরা চাই, ও এগিয়ে যাক।”
শ্বাশতী ভট্টাচার্য নিজেও গান করতেন; সংগীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত না করতে পারলেও মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন বুনে গেছেন।
“অঙ্কিতা ভালো একজন প্লেব্যাক সিঙ্গার হোক। প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হোক। টলিউড বলিউড-সবখানে গান করুক। সবার মুখে মুখে ওর গান ছড়িয়ে পড়ুক।”
মায়ের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে সাড়ে তিন বছর বয়স থেকে আধো আধো বুলিতে গানের সঙ্গে পরিচয় ঘটে অঙ্কিতার; আগ্রহ ছিল নাচেও। পরে নাচের স্কুলে ভর্তি করানো হলেও বাবা গানটাও শেখাতে চাইলেন; ভর্তি করালেন এলাকার গানের শিক্ষক রাধাপদ পালের কাছে।
গানে কন্যার আশাব্যঞ্জক উন্নতি দেখে অজপাড়া গাঁও থেকে প্রায় নব্বই কিলোমিটার পথ ভেঙে কলকাতায় গান শেখাতে আনা-নেওয়া করতেন মা; সেখানে সাত বছর ধরে গান শিখছেন রথীজিৎ ভট্টাচারিয়ার কাছে। সংগীতশিল্পী হিসেবে মেয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেই সেই পরিশ্রম স্বার্থক হবে বলে মনে করেন শ্বাশতী ভট্টাচার্য।
অঙ্কিতা ইছাপুর হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন; তার ছোটভাই অমিত ভট্টাচার্য মল্লিকপুর প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়েন।