দেশের খবর: আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত দিন আজ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫-এর কালিমালিপ্ত রক্তঝরা এ দিনেই জাতি হারিয়েছে তার গর্ব, ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সেদিন ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পরিবার-পরিজনকেও ঘৃণ্যতম পৈশাচিকতায় হত্যা করা হয়।
কিছু বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিকের চক্রান্ত ও সেনাবাহিনীর এক দল বিপথগামী উচ্চাভিলাষী সদস্যের নির্মম বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন শাহাদাত বরণ করেন তার প্রিয় সহধর্মিণী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল এবং নবপরিণীতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল। প্রবাসে থাকায় সেদিন প্রাণে রক্ষা পান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
নৃশংস সেই হত্যাযজ্ঞে আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কমকর্তা ও কর্মচারী। জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে স্মরণ করবে এই শহীদদেরও।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা ১৫ আগস্টে শাহাদাতবরণকারী জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেদিন ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাঙালির হাজার বছরের প্রত্যাশার অর্জন স্বাধীনতা এবং সব মহতী আকাঙ্ক্ষাকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। মুছে ফেলার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল বাঙালির বীরত্বগাথার ইতিহাসকেও। অবশ্য খুনিদের সেই ষড়যন্ত্র টেকেনি। বাঙালি ও বিশ্ববাসীর মানসপটে বঙ্গবন্ধু আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল, চিরভাস্বর।
অভিশপ্ত সেই দিনটিতে বাঙালি জাতির ললাটে যে কলঙ্কতিলক পরিয়ে দেওয়া হয়; দীর্ঘ ৩৪ বছর পর তা থেকে জাতি মুক্তি পায়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়। এর মধ্য দিয়ে এক কালো অধ্যায়ের অবসান ঘটে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাঙালির বিজয়ের অভিযাত্রা আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। জাতি এখন প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে বঙ্গবন্ধুর বাকি ছয় পলাতক খুনির ফাঁসি কার্যকরের মাহেন্দ্রক্ষণের।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ২১ বছর এই হত্যার বিচার যেমন হয়নি, তেমনি তার শাহাদাতবার্ষিকীতেও ছিল রাষ্ট্রীয় অবহেলা। নানা পথপরিক্রমায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। দিবসটি উপলক্ষে আজ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা নানা কর্মসূচি পালন করবে।
আজ সরকারি ছুটি। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল ও রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে আজ। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
সকাল সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করবে। সেখানে বিশেষ মোনাজাত ও কোরআন তেলাওয়াত অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টে শাহাদাতবরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সদস্যসহ অন্য শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক ও ফুলের পাপড়ি অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ ও দোয়ায় অংশ নেবেন। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন তিনি। এ সময় ফাতেহা পাঠ ও সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদানসহ বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
সারাদেশের মসজিদগুলোতে কোরআনখানি, মোনাজাত, দোয়া মাহফিল এবং মন্দির, গির্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদেও কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হবে বিশেষ প্রার্থনা সভা।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভা, মিলাদ, দোয়া মাহফিল, কবিতা পাঠ, রচনা, চিত্রাঙ্কন, হামদ-নাত প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সারাদেশে শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে রচনা এবং হামদ-নাত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।