নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। জলাবদ্ধতার কারণে টানা ১৬ বছর পরিত্যক্ত হয়ে পড়া সাতক্ষীরার ১৯ টি ছোট বড় বিলের সাড়ে চার হাজার একর জমিতে এবার ধান চাষ শুরু হয়েছে। এসব এলাকার চোখ জুড়ানো সবুজ সোনালী ফসল কৃষকের জীবনে এনে দিয়েছে নতুন দিন।
প্রতিবছরই এর আওতা বেড়ে চলায় কৃষি ফসলে এক ধরনের নতুন বিপ্লব এসেছে। একই সাথে এ এলাকার ১৩টি খালের ২৯ কিলোমিটার এলাকা পুনঃখনন করা হয়েছে। তিনটি নতুন স্লুইসগেট নির্মান করায় সাতক্ষীরা সদর ও আশাশুনি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা এখন সোনালী ধানে ভরে উঠছে।
মঙ্গলবার সাতক্ষীরায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লু গোল্ড প্রকল্পের আওতায় পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষকরা এই সুযোগ লাভ করছেন বলে এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। এতে আরও বলা হয় আরও কিছু খাল খনন এবং পলি অপসারন করে কৃষি ব্যবস্থাকে বেগবান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা দলগতভাবে অংশ নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতার বাস্তবায়ন করছেন।
কর্মশালায় বলা হয় সাতক্ষীরা পোল্ডার ২ এর আওতায় ৬৩ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধের মধ্যে ৩৬ কিলোমিটার সংস্কার করায় কৃষি জমি ও জনগনের ব্যক্তিগত সম্পদসহ সব স্থাপনাকে জলাবদ্ধতা ও বন্যার পানি থেকে রক্ষা করা গেছে। এরই মধ্যে নদী ও খাল থেকে অবৈধ নেটপাটা অপসারন, আগে দেওয়া সব ইজারা বাতিল , নতুন করে কোনো ইজারা না দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি কর্মসূচি এগিয়ে চলেছে। জেলা প্রশাসন কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ এতে সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে বলে কর্মশালায় উল্লেখ করা হয়।
কর্মশালায় বলা হয় জনগনকে কৃষি, গবাদি পশু পালন, হাঁসমুরগি পালন, প্রাণি সম্পদ সংরক্ষন, কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় উদ্যোগী করে তোলা হয়েছে। এরই মধ্যে বাড়ির পাশে ঘেরা বেড়ায় লাগানো বাসক গাছের পাতা ওষুধ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে কেবলমাত্র ফিংড়ি ইউনিয়নের জনগন চলতি বছর প্রায় সাত লাখ টাকা আয় করেছেন। এ এলাকার স্লুইসগেটগুলি সংস্কার করায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বহুলাংশে নিশ্চিত করা গেছে। অধিক পানি এলাকায় ভাসমান বস্তায় সবজি চাষ করছেন কৃষকরা।
সাতক্ষীরা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন জেলার জলাবদ্ধতা দুরীকরনে সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরায় ‘ক্লিন সাতক্ষীরা গ্রীন সাতক্ষীরা’ নামের এক সামাজিক আন্দোলন বেগবান করা হয়েছে। নদী ও খাল খননে সরকারের আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরা শহরের প্রাণ সায়ের খাল খনন কাজের লক্ষ্যে দুই তীরের অবৈধ ইজারা বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা বিভাগ ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য মুনসুর আহমেদ, ব্লু গোল্ড টিম লীডার গাই জোনস, পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার উপপরিচালক হোসাইন শওকত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মো. বদিউজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মো. আবু সাঈদ ,উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাশীষ চৌধুরী, কৃষি সম্পসারন উপপরিচালক হুমায়ুন কবির,ইউপি চেয়ারম্যান শামসুর রহমান প্রমূখ।
কর্মশালায় বলা হয় সাতক্ষীরা পোল্ডার ২ এর আওতায় ১ লাখ ৯৩ হাজার পরিবার রয়েছে। তারা এক লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে এখন বহুমুখী শস্য উৎপাদন করতে পারছেন। এরই মধ্যে জলাবদ্ধতামুক্ত আমোদখালি খালের এসব এলাকায় শস্য বৈচিত্র্য দৃশ্যমান হয়ে পড়েছে।
সাতক্ষীরায় পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা
পূর্ববর্তী পোস্ট