- ‘ডিজিটাল গভর্নমেন্ট আইন, ২০১৯’-এর খসড়া তৈরি
- * সরকারি সব দফতরের আর্থিক লেনদেন হবে অনলাইনে
- * বিদেশ থেকেও দাফতরিক কাজ করতে পারবেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
- * কম্পিউটার হ্যাকিংসহ তথ্য নষ্টের শাস্তি ১০ বছরের দণ্ড ও কোটি টাকা জরিমানা
দেশের খবর: সরকারি অফিসগুলোর সব ধরনের সেবামূল্য বা ফি আদায় হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা, পেনশন, অনুদান, ক্ষতিপূরণসহ সব আর্থিক লেনদেনও হবে অনলাইনে। ফলে সরকার নির্ধারিত সেবামূল্যের বেশি কোনো টাকা নেয়া যাবে না। এসব বিধান রেখে ঘুষসহ সব ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে ‘ডিজিটাল গভর্নমেন্ট আইন, ২০১৯’-এর খসড়া তৈরি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র আরও জানায়, প্রস্তাবিত আইনটি কার্যকর হলে প্রশাসনের সর্বস্তরে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত হবে। সরকারি সব দফতরে চালু হবে ডিজিটাল সিল-স্বাক্ষর ও রেজিস্টার, নোটিশ আদান-প্রদান, ডিজিটাল গভর্নেন্স তহবিল, অভিন্ন ই-মেইল পদ্ধতি ও ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা। কেউ আইনের বিধান লঙ্ঘন করে প্রচলিত নিয়মে দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা ও আর্থিক লেনদেন করলে অসদাচরণ বলে গণ্য হবে।
অনিয়ম ও দুর্নীতির উদ্দেশ্যে কেউ কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাকিং, তথ্য ধ্বংসসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা সংক্রান্ত অপরাধ করলে শাস্তি হবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে। আর এ ধরনের অপরাধের জন্য অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত আইনটির খসড়া তৈরি হলেও তা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তৈরি করা ১৫ পৃষ্ঠার প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করতে ১৮ সেপ্টেম্বর একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন এমন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে দেশে বেশকিছু আইন ও বিধি রয়েছে। মূলত ডিজিটাল গভর্নমেন্ট আইনটি একটি সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ আইন হতে যাচ্ছে। জনগণকে সহজে এবং দ্রুত সেবা দিতেই মূলত এই আইন করা হচ্ছে।
আইনটি কার্যকর হলে সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর কম্পিউটার পরিচালনা ও তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত মৌলিক জ্ঞান থাকতে হবে। সরকারি সংস্থাগুলো নিজেদের সেবা ও এর মূল্য সিটিজেন চার্টারের মাধ্যমে উন্মুক্ত স্থানে প্রকাশ করবে। সরকার নির্ধারিত সেবামূল্যের বাইরে কোনো ধরনের অর্থ নিতে পারবে না। আবার সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ সব ধরনের পাওনা অনলাইনে দেয়া হবে। ফলে সরকারি অফিসগুলোতে অনিয়ম বা দুর্নীতি অনেকটাই কমে যাবে।
প্রস্তাবিত খসড়ায় ‘ডিজিটাল গভর্নমেন্ট’-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- কোনো কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস বা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি কার্যক্রম সঠিক ও সুচারুভাবে সম্পাদন করা এবং সেবাসমূহ দ্রুত জনগণের কাছে পৌঁছানো। আর তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা ও জনসেবা করার লক্ষ্যে সব সরকারি দফতরের কাজ ডিজিটালাইজেশন করাই আইনের প্রধান উদ্দেশ্য।
আইনের অধীনে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার থাকবে। যেখানে সরকারি দফতরের অনলাইনে প্রাপ্ত আবেদন, ডিজিটাল নথি ও অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন, ডাটাবেজ, ডিজিটাল কন্টেন্ট ও সফটওয়্যারের তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। প্রস্তাবিত এই তথ্যভাণ্ডারটি অবশ্যই বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই হতে হবে। এমনকি এই তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত কোনোভাবেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পরিবর্তন করা যাবে না।
খসড়ায় আরও বলা হয়- সরকারি দফতরের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং নাগরিক সেবায় উদ্ভাবনকে আরও গতিশীল করতে একটি উন্মুক্ত সরকারি উপাত্ত (ওপেন গভর্নমেন্ট ডাটা) প্ল্যাটফরম তৈরি করা হবে। যেখানে সরকারি দফতরগুলো নির্ধারিত মানদণ্ড ও পদ্ধতি অনুসরণ করে উপাত্ত সংযোজন করতে পারবে।
প্রত্যেক সরকারি দফতরে তথ্য ও সেবা সংবলিত একটি বাতায়ন থাকবে, যা জাতীয় তথ্য বাতায়নের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। সরকারি দফতরগুলো নিয়মিতভাবে নিজ নিজ তথ্য বাতায়নে তথ্য, উপাত্ত ও সেবা সন্নিবেশ ও হালনাগাদ করবে। জনগণের দোরগোড়ায় তথ্য ও সেবা পৌঁছানোর জন্য সরকার দেশব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে। আইনটি কার্যকর হলে সরকারি দফতরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ডিজিটাল স্বাক্ষরে প্রয়োজনীয় নথি নিষ্পত্তি করবেন। এমনকি নিজ কর্মস্থলের বাইরে দেশে বা বিদেশে থেকেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে দাফতরিক কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।
সরকারি দফতরগুলোর প্রদত্ত ফি, কর, জরিমানা, ক্ষতিপূরণ, সারচার্জ, রেভিনিউ স্ট্যাম্প, নন-রেভিনিউ স্ট্যাম্প, জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এবং সরকার নির্ধারিত অন্য যে কোনো ফি বা অর্থ ডিজিটাল পদ্ধতিতে আদায় করা হবে। এছাড়া সরকারি অফিসগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে চাকুরেদের বেতন-ভাতা, পেনশন, আনুতোষিক, অনুদান, ক্ষতিপূরণ, বৃত্তি এবং অন্য বিষয়াদি প্রদান করবে।
এছাড়া আইনের আওতায় সেবা প্রত্যাশীদের কাছে ডিজিটাল সেবা সহজে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, পোস্ট অফিস ও অন্যান্য সরকারি সেবাপ্রদানকারী সংস্থা একক বা সমন্বিতভাবে ডিজিটাল সেবা কেন্দ্র স্থাপন করবে।সূত্র: যুগান্তর