নিজস্ব প্রতিনিধি : ষ্ষ্ঠ শ্রেণির এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে অপহরনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে এক যুবকের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। তাকে সহযোগিতা করার অপরাধে অপর এক যুবককে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হোসনে আরা আক্তার এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন, শ্যামনগর উপজেলার সোনাখালি গ্রামের পরিমল মণ্ডলের ছেলে উজ্জ্বল মণ্ডল ও একই গ্রামের আব্দুস সামাদ গাজীর ছেলে শাহাদাৎ গাজী।
মামলার বিবরনে জানা যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম পাতাখালি গ্রামের দাউদ আলী গাজীর মেয়ে পাতাখালি সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ষ্ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী রেশমা খাতুন। ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রলয়ংকারী আইলার কারণে দাউদ আলী গাজী স্বপরিবারে চণ্ডিপুর গ্রামের একটি বাড়িতে ভাড়া থেকে দিনমজুর খেটে সংসার নির্বাহ করতো। একই বাড়িতে ভাড়া থাকতো সোনাখালি গ্রামের উজ্জ্বল মণ্ডল ও তার পরিবারের সদস্যরা। একই স্থানে ভাড়া থাকার সুযোগে উজ্জ্বল মাঝে মাঝে রেশমাকে কু’প্রস্তাব দিতো। বিষয়টি রেশমার পরিবারের পক্ষ থেকে উজ্জ্বলের অভিবাবকদের বলে কোন লাভ না হওয়ায় তারা ২০১০ সালের ৯ জানুয়ারি গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। ওই বছরের ১১ জানুয়ারি রেশমা ও তার বড় বোন ময়না চকবারা গ্রামে তার ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে যায়। ১৪ জানুয়ারি দুপুরে বুড়িগোয়ালিনি গ্রামের বেড়িবাঁধের উপর খাওয়ার পানি আনতে গেলে মোটর সাইকেলে এসে মুখ চেপে ধরে উজ্জ্বল ও শাহাদাৎসহ অজ্ঞাতনামা দু’জন রেশমাকে অপহরণ করে। বিষয়টি উজ্জ্বল ও শাহাদাতের অভিবাবকদের অবহিত করা হলে তারা মেয়েকে এক সপ্তাহের মধ্যে ফিরিয়ে এনে দেবে বলে সময় নেয়। একপর্যায়ে মেয়েকে না পেয়ে তিনি ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৩০ ধারায় উজ্জ্বল, তার বাবা, মা ও শাহাদাতের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক হাবিবুর রহমান ২০১০ সালের ২৬ মে উজ্জ্বল ও শাহাদাতের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার পাঁচজন সাক্ষীর জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনা শেষে আসামী উজ্জল মন্ডলের বিরুদ্ধে ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে অপহরণ ও শাহাদাতের বিরুদ্ধে অপহরণে সহযোহীতা করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক উজ্জলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড. এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। শাহাদাতকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামী উজ্জ্বল মণ্ডল ও শাহাদাৎ পলাতক রয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন বিশেষ পিপি অ্যাড. এস এম জহুরুল হায়দার বাবু।
সাতক্ষীরায় ছাত্রী অপহরণের অভিযোগে যুবকের যাবজ্জীবন
পূর্ববর্তী পোস্ট