প্রেস বিজ্ঞপ্তি : সাতক্ষীরার তালা সদরের শিবপুর গ্রামের যুদ্ধকালীন সময়ের ডাকাত, লুণ্ঠনকারী, খুনী এখন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। শিবপুর গ্রামের মৃত. হাজের আলী বিশ্বাসের ছেলে বর্তমান নামধারী মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের যুদ্ধকালীন সময়ের তা-বলীলার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে আজও অনেক ভুক্তভোগীরা। তবে এখন সেই মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ আর হতাশা যুদ্ধকালীন সময়ের মোহাম্মদ আলীর হাতে খুন হওয়া ওমর আলী সরদারের স্ত্রী তফুরোন বিবিসহ তার হাতে ক্ষতিগ্রস্থদের। মোহাম্মদ আলীর অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে বুধবার বিকেল ৪টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তালার মাঝিয়াড়া বাজার এলাকার রওশন আরা বেগম।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা নামধারী মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস আমার নাবালিকা মেয়ে মনজিলা খাতুন (১৩) কে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক ও তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর বেপোরোয়া মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস আমাকে ও আমার মেয়েরেক খুন-জখমের হুমকি দিচ্ছে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে তালার শিবপুর গ্রামের মৃত. এজাহার আলী সরদারের ছেলে ওমর আলী সরদারকে রাতের আধারে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর বাড়ির পাশে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। মরদেহ টুকরো টুকরো করে দেয়। ডাকাত মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের সঙ্গে ছিল তার সহযোগীরা। স্বামীহারা তফুরোন বিবি যুদ্ধকালীন সময়ে স্বামী ওমর আলীকে হারিয়ে আজও কষ্টে বেঁচে আছেন। পাশ্ববর্তী ইসলামকাটি ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মৃত. সুধীর হোড়ের ছেলে জয় হোড়ের বাড়িতে ডাকাতি করার সময় মোহাম্মদ আলীকে জয় হোড় চিনতে পারায় জয় হোড়কে গুলি করে। এতে জয় হোড় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়। জয় হোড় এখনো সেই ক্ষত নিয়ে জীবিত। মাঝিয়াড়া গ্রামের মির্জা নজরুল ইসলাম নজুর বাড়িতে ডাকাতিকালে মোহাম্মদ আলীকে চিনে ফেলায় মির্জা নজরুল ইসলামের মাতাকে কুপিয়ে জখম করে। একই গ্রামের মরহুম আব্দুল হান্নান চিশতির বাড়িতে শুপারী চুরিকালে হাতেনাতে আটক হয়। আটক হওয়ার পর এই ঘটনায় কারাগারেও যেতে হয় মোহাম্মদ আলীকে। মরহুম আব্দুল হান্নান চিশতির ছেলে উপজেলা আ.লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ইদ্রিস আজও মোহাম্মদ আলীকে রাজাকার হিসেবে সম্বোধন করেন।
২০০৪ সালে ১৮ নভেম্বর তালার মাঝিয়াড়া এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য শেখ সিদ্দিকুর রহমান যুদ্ধকালীন সময়ে মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের খুন, ডাকাতি, চুরি, লুণ্ঠনসহ সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতনের বাস্তব ঘটনা তুলে ধরে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে সিদ্দিকুর রহমান উল্লেখ করেন, মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস তালার বারুইহাটি গ্রামের তফেল জোয়াদ্দার, আনছার আলী বিম্বাস, আজেদ আলী মোড়ল, মাঝিয়াড়া গ্রামের মৃত. ছবেদ আলী মির্জার বাড়ি তিন বার, মৃত. আব্দুর রশিদ মির্জার বাড়ি দুইবার, শেখ আশরাফ আলীর বাড়িতে দুইবার, তার ছেলে শেখ সিদ্দিকীর বাড়িতে দুইবারসহ গোপালপুর গ্রামের ৭/৮টি হিন্দু বাড়িতে একাধিকবার ডাকাতি করেন। এছাড়া যুদ্ধকালীন সময়ে মদ, জুয়া, নারীদের জোরপূর্বক ধর্ষনের কথাও তুলে ধরে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তভূক্তির না করাসহ মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, ২০০৯ সালে ১৫ অক্টোবর তালা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অমল কান্তি ঘোষ তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন করেন। উপজেলার ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষতির আবেদনে বলা হয় ভূয়া তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উত্তোলন করেছেন মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস। ভূয়া তথ্যে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উঠিয়ে ভাতা উত্তোলন করছেন মোহাম্মদ আলী। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তুলতে তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে তালা সহকারি জজ আদালতে মামলা করেন মোহাম্মদ আলী। যার নং ৩৬/২০০৫ ইং। তবে বিচারক দীর্ঘ শুনানি শেষে মামলাটি খারিজ করে দেন। যুদ্ধকালীন সময়ে মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস তৎকালীন বিতর্কিত বামফ্রন্ট (নকশাল) কামেল বাহিনীর অন্যতম সদস্য ছিল। এই আবেদনটি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভন্ন দপ্তরে পাঠান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অমল কান্তি ঘোষ। মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের একমাত্র ছেলে মোস্তফা বিশ্বাস ৩ বছর আগে ফেন্সিডিলসহ সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল খাটে। সম্প্রতি ইসলামকাটি ইউনিয়নের গোপলপুর গ্রামের কালিপদ বিশ্বাসের ছেলে বিধান বিশ্বাসের জমি দখল করতে উঠেপড়ে লেগেছে। মুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে চাঁদা চায়। তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য সঞ্চয় দের বাঁধার কারণে সম্ভব হয়নি। বাস্তব এ ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাসহ তালাবাসীর সর্বজন স্বকৃত। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ায় নকশাল বাহিনীর সদস্য হয়েও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম চলে যায় এই মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের। গেজেট নং ২৩০৯। মুক্তিবার্তা নং ০৪০৪০৬০১৯৯। আমি জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারিদের মুক্তিযোদ্ধা নামধারী মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের যুদ্ধকালীন সময়ে ডাকাত, খুনী, ধর্ষণকারী মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের ঘটনাবলী তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনকালে রওশন আরা বেগমের নাবালিকা মেয়ে মনজিলা খাতুন, মোহাম্মদ আলীর হাতে খুন হওয়া ওমর আলীর স্ত্রী তফুরোন বিবি, নির্যাতনের স্বীকার হামিদা বেগম উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরার যুদ্ধকালীন ডাকাত, ধর্ষণকারী মোহাম্মদ আলীর অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষার দাবি
পূর্ববর্তী পোস্ট